লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের অপরাধপ্রবণ গ্রাম আন্ধারমানিক। সদর মডেল থানার অধীনে এ গ্রামটি কমলনগর, চন্দ্রগঞ্জ থানা ও নোয়াখালী জেলার সীমানাবর্তী। থানা থেকে এ গ্রামের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থাও অনুন্নত।

এ জন্য অপরাধীরা খুব সহজেই অপরাধ করে পালিয়ে যেতে পারে। তবে এবার জনমনে স্বস্তি ফিরছে। শুরু হয়েছে পুলিশ ক্যাম্পের কাজ। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, এবার আলোকিত হবে আন্ধারমানিক গ্রাম।

রোববার (২৭ জুন) দুপুরে আন্ধারমানিক গ্রামে ফিতা কেটে ও ফলক উন্মোচন করে সদর মডেল থানার অধীনস্থ পুলিশ ক্যাম্প নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন জেলা পুলিশ সুপার ড. এইচএম কামরুজ্জামান।

তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক ইবনে হুছাইন ভুলুর সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিমতানুর রহমান, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসীম উদ্দিন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আক্তার হোসেন বোরহান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন প্রমুখ।

জানা যায়, জেলা সদর মডেল, কমলনগর, চন্দ্রগঞ্জ থানা ও নোয়াখালী সদরের সীমান্তবর্তী তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের আন্ধারমানিক এলাকা। দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকায়  চুরি, ডাকাতি, খুন, মাদক কারবারি, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধের অভয়ারণ্য ছিল।

সদর থানা এলাকা থেকে ২০ কিলোমিটার দূর হওয়ায় এবং রাস্তাঘাট অনুন্নত থাকায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর পুলিশ পৌঁছানোর আগেই অপরাধীরা পালিয়ে যেত। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় লক্ষাধিক বাসিন্দার পুলিশি সেবা নিশ্চিত করার দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এলাকাবাসীর।

অবশেষে ইউপি চেয়ারম্যান ওমর ফারুক ও তার ভাই যুবলীগ নেতা অনুপম হুছাইন তাদের মালিকানাধীন ৬০ শতক জমি পুলিশ ক্যাম্পের জন্য দান করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ প্রশাসন আন্ধারমানিক গ্রামে ক্যাম্প স্থাপনের উদ্যোগ নেয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, এ গ্রামে ১৮ জানুয়ারি কাশেম আলী নামে এক ইটভাটা শ্রমিক হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়। গেল বছরের ১৮ ডিসেম্বর মনির হোসেন নামে এক যুবলীগ নেতাকে বাসায় ঢুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া গরু চুরি ও মাদক বেচাকেনাসহ বিভিন্ন অপরাধ সংগঠিত হয় ওই এলাকায়।

এ এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা নিরক্ষর। এতে স্থানীয় মোড়ল বা সুবিধাভোগী কিছু লোক অসহায় মানুষকে প্রতিনিয়ত প্রতারিত করে আসছে। জমিসংক্রান্ত ঘটনায় এ গ্রামেরই বাসিন্দা জিল্লুর রহিমের প্রতারণায় শতাধিক পরিবার এখনও জিম্মি হয়ে আছে।

কয়েকজন নারী-পুরুষ জানায়, আন্ধারমানিক গ্রাম দিনে সূর্যের আলোয় আলোকিত থাকলেও রাতের অন্ধকারে খুব ভয়ানক। এ গ্রামে হত্যা, ধর্ষণ, মাদক, চোরাচালান রাতের আঁধারে সংগঠিত হয়। পুলিশ ক্যাম্পটি স্থাপনের মাধ্যমে এ এলাকার বাসিন্দারা স্বস্তিতে চলাফেরা করতে পারবেন।

তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক অনুপম হুছাইন বলেন, এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষই নিরক্ষর। এ সুযোগে সুবিধাবাজরা স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতারিত করে আসছে। হত্যা, মাদকসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ এ এলাকায় প্রায়ই লেগে থাকে। এসব অপরাধ রোধে আমরা পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনে জমি দিয়েছি।

লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার ড. এএইচএম কামরুজ্জামান বলেন, পুলিশ ক্যাম্পের মাধ্যমে ৩টি থানা ও নোয়াখালীর সীমান্তবর্তী আন্ধারমানিক গ্রামে পুলিশি সেবা পেতে আর বিঘ্ন ঘটবেনা। সমুন্নত থাকবে এসব এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এমএসআর