নির্মিতব্য ঘরের সামনে উপকারভোগী এক নারী

মুজিববর্ষে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ভূমিহীন ও গৃহহীন এক হাজার ৫৯১টি পরিবার নতুন ঘর পাবে। ইতোমধ্যে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ভূমিহীন ব্যক্তিদের তালিকা চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়ছে। ঘর নির্মাণের কাজও শুরু হয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উপজেলার শাল্লা, বাহাড়া, হবিবপুর ও আটগাঁও ইউনিয়নে ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণে কাজ চলছে। শাল্লা ইউনিয়নের ৪৩০ জন, আটগাঁও ইউনিয়নের ৩৬০ জন, বাহাড়া ইউনিয়নের ৩৩১ জন ও হবিবপুর ইউনিয়নের ৩০০ জন উপকারভোগীর তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও আরও ১৭০ জনের তালিকা পাঠানো হয়েছে। 

শাল্লা ইউনিয়নের গোবিন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা রবীন্দ্র চন্দ্র দাস। নিজের জায়গা নেই। অন্যের জমিতে ঘর করে বসবাস করছেন। মা-বাবাসহ তার পরিবারে ছয়জন সদস্য। ছোট দুই বোন ও এক ভাই রয়েছে। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। এজন্য দুই বোনকে ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরিতে পাঠিয়েছেন। মুজিববর্ষে তিনি ঘর পাবেন। থাকার মতো নিজের নতুন ঠিকানা পাবেন। 

রবীন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, আমার জায়গা জমি নেই। গার্মেন্টসে দুই বোন চাকরি করে কিছু টাকা পাঠিয়েছে। সেই টাকায় কোনো মতে একটি ঘর বানিয়ে বসবাস করছি। নিজেও দিনমজুরের কাজ করে পরিবারের ব্যয় বহন করি। এছাড়াও ৭ কেয়ার (৩০ শতাংশে ১ কেয়ার) জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করি। 
নতুন ঠিকানায় নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছি।

হবিবপুর ইউনিয়নের আনন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা বীরেন্দ্র দাস। আনন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা হলেও অভাব-অনটনের কারণে সংসারে আনন্দ ছিল না কখনও। চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে অভাবের জন্য বড় ছেলেকে পড়াশুনা করাতে পারেননি তিনি। স্কুলে যাওয়ার বয়স থেকেই কাজে লাগিয়েছেন ছেলেকে।

মাথা গোঁজার ঠাঁই হচ্ছে গৃহহীনদের

বীরেন্দ্র দাস বলেন, চাচা থাকার জন্য একটু জায়গা দিয়েছেন। সেই জায়গায় ছোট একটি ঘর করে থাকি। নিজে অন্যের ভাড়া মোটরসাইকেল চালাই। এ দিয়ে সংসার চলে না। তাই বাপ-ছেলের আয় দিয়ে পরিবার চালাতে হয়। নিজে জমি কিনে বাড়ি করার ক্ষমতা নেই আমার। এই মুজিববর্ষে ঘর পাবো। আর কিছু না হলেও নিজের ঘর হবে।

আটগাঁও ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা মোছা. গোলেনা আক্তার। তার দিনমজুর স্বামী ওয়াহাব উদ্দিন দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ। তাদের সংসারে পাঁচ মেয়ে ও তিন ছেলে রয়েছে। বড় ছেলে সায়েমের ১২ বছর বয়স। অভাবের ১০ সদস্যের সংসার চালাতে সায়েমকেও কাজে যেতে হয়। 

গোলেনা আক্তার বলেন, সবাই কাজ করি। ছেলেকে স্কুলে পাঠাতে পারিনি। অসুস্থ বাবার সঙ্গে সায়েমও কাজে যায়। দুজনের মজুরি দিয়ে পরিবার চলে। ভাঙা ঘরে বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। এতে রাতে কষ্ট করতে হয়। নিজের ঘর হলে আমাদের থাকার কষ্ট দূর হবে।

বাহাড়া ইউনিয়নের মেদা গ্রামের বাসিন্দা মামুন আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের অভিভাবক। তিনি আছেন বলেই আমাদের ঠিকানা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের নিজের জমি নেই। এতদিন ভাঙা ঘরে থাকতাম। সে জন্য সামাজিক মর্যাদাও ছিল না। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের থাকার জন্য ঘর দিচ্ছেন। তাই উনার জন্য দোয়া করি আমরা। 

শাল্লা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (আল আমিন চৌধুরী) ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার এই মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না। সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করার জন্য মাঠপর্যায়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমার উপজেলায় কেউ গৃহহীন থাকবে না। সবাই ঘর পাবে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল মুক্তাদির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ১০টি ঘর আগেই হস্তান্তর করেছি। আরও এক হাজার ৫৭১টি ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। আমাদের টার্গেট হলো আগামী ২৬ মার্চের ভেতর ঘরের কাজ শেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করা। সে লক্ষ্যেই আমরা আগাচ্ছি। 

আরএআর