ফাইল ছবি

আশিকুল আলম। বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে পণ্য রফতানির ব্যবসা করছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের মুন্সেফপাড়ার এই তরুণ ঘোরাঘুরি করতে ভালোবাসেন। কাশ্মীরের অপার সৌন্দর্য দেখতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ অথবা মার্চের প্রথম দিকে কাশ্মীর ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দেয় করোনাভাইরাস।

অদৃশ্য করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ১২ মার্চ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশি যাত্রী পারাপার কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে ভারতের আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট। এর ফলে ভারতে যেতে পারেননি আশিকুল।

মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে আশিকুলের মতো অনেকেই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঘুরতে বা প্রয়োজনীয় কাজে ভারতে যেতে পারেননি। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে যাত্রী পারাপার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় চেকপোস্ট থেকে আয় বঞ্চিত হচ্ছেন সরকার। এখন পর্যন্ত আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট থেকে সরকার অন্তত পাঁচ কোটি টাকা হারিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে ভারতে যাত্রী পারাপার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সরকার আয় বঞ্চিত হচ্ছেন। এখন পর্যন্ত আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার। আবার কবে যাত্রী পারাপার কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে সে সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই’।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারত থেকে পণ্য আমদানি না হওয়ায় আখাউড়া স্থলবন্দর থেকে সরকারের কোনো রাজস্ব আয় নেই। শুধু পণ্য রফতানির জন্য বৈদেশিক মুদ্রা পেয়ে থাকে সরকার। কিন্তু আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট থেকে যাত্রীদের ভ্রমণ কর বাবদ মাসে অন্তত পৌনে এক কোটি টাকা যায় সরকারি কোষাগারে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার আগে আখাউড়া চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫শ যাত্রী ভারতে যাতায়াত করতেন। বিভিন্ন উৎসবের সময়গুলোতে প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশি যাত্রী গমন করে থাকেন ভারতে। প্রত্যেক যাত্রীকে ভ্রমণকর হিসেবে ৫শ টাকা দিতে হয়। 

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মহামারি আকার ধারণ করার পর গত ১২ মার্চ থেকে বাংলাদেশি যাত্রীদের ভারতে প্রবেশ বন্ধ করে দেয় আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট কর্তৃপক্ষ। শুধু কূটনীতিক, অফিসিয়াল, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন প্রকল্পের ভিসাধারীদের যাতায়াত সুবিধা রাখা হয়। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত যাত্রী পারাবার বন্ধ রাখার কথা উল্লেখ করে নোটিশ জারি করা হলেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি যাত্রী পারপার কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়নি।

সুমন রায় নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক যুবক জানান, ভারতে প্রবেশের জন্য এক বছরের মাল্টিপল এন্ট্রির ভিসা আছে তার। এই ভিসা দিয়ে আখাউড়া চেকপোস্ট ব্যবহার করে প্রায়ই আগরতলায় যেতেন তিনি। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর চেকপোস্ট বন্ধা থাকায় তিনি আর ভারতে যেতে পারেননি। এখন ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে।

মো. সোহেল মিয়া নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের সরকারপাড়া এলাকার এক তরুণ জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকা যেতে যে সময় লাগে তারচেয়েও কম সময়ে আখাউড়া চেকপোস্ট দিয়ে আগরতলায় যাওয়া যায়। সেজন্য প্রয়োজনীয় কেনাকাটা বা ঘোরাঘুরির জন্য প্রায়ই আগরতলায় যাওয়া হতো তার। করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর আর আগরতলায় যাওয়া হয়নি। কবে আবার সবকিছু স্বাভাবিক হবে- সেই অপেক্ষায় দিন কাটছে তার।

আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, দুই দেশের চেকপোস্ট দিয়ে এখন শুধু আটকা পরা নাগরিকদের নিজ নিজ দেশে ফিরতে দেয়া হচ্ছে। তবে সম্প্রতি চিকিৎসা ভিসাধারীদেরও ভারতে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সেই সংখ্যা খুবই কম। একদিন পর পর দুই থেকে তিনজন চিকিৎসা ভিসাধারীদের ভারতে প্রবেশ করতে দিচ্ছে আগরতলা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ।

গত ৭ মার্চ থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত আখাউড়া চেকপোস্ট দিয়ে ১ হাজার ২৭৮ জন বাংলাদেশি নাগরিক নিজ দেশে ফিরেছেন। তারা করোনাভাইরাসের কারণে ভারতের বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়েছিলেন। এ সময়ের মধ্যে ভারতে গমন করেছেন কেবল ১০৯ জন বাংলাদেশি। একই সময়ে ৮২৪ জন ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন আর বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছেন ১ হাজার ৩৬৬ জন।আখাউড়া চেকপোস্ট দিয়ে ভারত গমনকারী প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকেই ৫শ টাকা করে ভ্রমণ কর পেয়েছে সরকার।

আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুলিশের ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আখাউড়া চেকপোস্ট দিয়ে পারাপার হওয়া যাত্রীদের অধিকাংশই পর্যটক ভিসাধীরা। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে পর্যটক ভিসাধারীদের প্রবেশাধিকার স্থগিত রাখা হয়েছে। সম্প্রতি নতুন করে যারা চিকিৎসা ভিসা নিয়েছেন তাদের ভারতে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর আগে যারা ভিসা নিয়েছিলেন তারা প্রবেশ করতে পারছেন না’।

তিনি আরও বলেন, কবে নাগাদ যাত্রী পারাপার কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে সে সম্পর্কে আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট কর্তৃপক্ষ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়ছে। এ বছর আর যাত্রী পারাপার কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে বলে মনে হচ্ছে না।

এসপি