সড়কে ভোগান্তি, নৌপথে স্বস্তি
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (০১ জুলাই) থেকে সারাদেশে সর্বাত্মক লকাডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। এ কারণে রাজধানী ঢাকা ছেড়ে আসছে ঘরমুখী মানুষ। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জের প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এলাকায় এসব মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। তবে সড়ক পথে ভোগান্তি হলেও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে স্বস্তিতেই পারাপার হচ্ছে ঢাকা থেকে আসা এসব মানুষ।
এ দিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সড়ক পথে চরম ভোগান্তি নিয়েই বাড়ি যাচ্ছেন যাত্রীরা। ছোট ছোট বিভিন্ন যানবাহনে বাড়তি ভাড়া দিয়ে যাত্রীরা পাটুরিয়া ফেরিঘাটের দিকে যাচ্ছেন। সরকার আগামী এক সপ্তাহের জন্য কঠোর লকডাউন দিলেও এর সময়সীমা বাড়তে পারে বলে ধারণা করেছেন ঘরমুখী অনেকেই। এতে ঈদুল আজহার (কুরবানির ঈদ) আগে এই কঠোর লকডাউনে পরিবার ও স্বজনদের নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফেরা সম্ভব নাও হতে পারে। তাই পাটুরিয়া ঘাট পার হয়ে বাড়ি যাচ্ছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মানুষ।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (৩০ জুন) দুপুরে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ভাড়ায় মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, ভ্যানে করে ঢাকা থেকে আসা ঘরমুখী যাত্রীদের পাটুরিয়া ফেরিঘাটের যেতে দেখা গেছে। বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে হাকডাকে যাত্রী তুলতে দেখা গেছে বেশ কয়েকজন ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকদের। দেড় থেকে দুইশত টাকা ভাড়া হলেই দুইজন যাত্রী নিয়ে এসব মোটরসাইকেল চালক যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছেন পাটুরিয়া ফেরিঘাটে। আবার অনেক যাত্রী অটোরিকশা ও ভ্যানে করে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
পাটুরিয়া ঘাট সূত্রে জানা যায়, দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। বিভিন্ন জেলায় লকডাউন চললেও সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বাড়ছেই। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার সারাদেশে সর্বাত্মক কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে। এর আগে গত সোমবার থেকে সারাদেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে এই কঠোর লকডাউন কার্যকর হবে। এ কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১ জেলার মানুষ বাড়ি যেতে শুরু করেছে। এতে পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় সকালের দিকে যাত্রীদের কিছুটা চাপ থাকলেও দুপুরের দিকে যাত্রীর সংখ্যা অনেক কমে যায়।
বিজ্ঞাপন
দূরপাল্লার গাড়ি বন্ধ থাকায় সড়কে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও হাইয়েসসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও কম। তবে ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে ১২টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করছে ফেরি কর্তৃপক্ষ।
মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে আলাপকালে ঢাকার পল্লবী থেকে আসা যাত্রী হারুন মিয়া জানান, ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চাকরি করেন তিনি। সড়কে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় গাবতলী থেকে ৫০০ টাকা ভাড়া দিয়ে ভ্যানে করে বারবাড়িয়া ব্রিজ পর্যন্ত আসেন। এরপর ১২০ টাকায় আরেকটি অটোরিকশায় মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে এসেছেন। সেখান থেকে ২০০ টাকা ভাড়ায় একটি মোটরসাইকেলে করে পাটুরিয়া হয়ে গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায় যাবেন।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের তরা এলাকায় কথা হয় ফরিপুরগামী যাত্রী আইয়ুব আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় একটি শপিংমলে চাকরি করি। কঠোর লকডাউনে বন্ধ থাকবে শপিংমল, কাজকর্মও নেই। ঢাকায় থেকে কী করব? এই কঠোর লকডাউন ঈদের আগে শেষ নাও হতে পারে। এ জন্য স্ত্রী সন্তান নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। তবে সড়ক পথে বাস না থাকায় চরম ভোগান্তি নিয়েই বাড়ি যাচ্ছি।
ঢাকার গাউছিয়া মার্কেটের একটি পোশাকের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন হুমায়ন কবির। তিনিও আজ গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ যাচ্ছেন। মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের মানরা ব্রিজ এলাকায় কথা হলে তিনি বলেন, আমিনবাজার থেকে এক হাজার টাকা ভাড়া মিটিয়ে একটি মোটরসাইলে করে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এসেছি। যাত্রাপথে ক্লান্তি দূর করেত চা খেতে বিরতি নিয়েছি। যাব পাটুরিয়া ফেরিঘাটে। লকডাউনে দোকান বন্ধ থাকলেও মেস ভাড়া আর খাওন খরচ তো বন্ধ থাকবে না? ঢাকায় বেকার বসে না থেকে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে থাকা ভলো।
মহাসড়কের পরিস্থিতি জানতে চাইলে গোলড়া হাইওয়ে থানার ইনচার্জ মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, কঠোর লকডাউনের আগে কিছু মানুষ মহাসড়ক দিয়ে বিভিন্ন ছোট ছোট যান রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেলে করে পাটুরিয়া ঘাটে যাচ্ছে। তবে মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস, স্থানীয় যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। কিছু ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার চলছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ১৬টি ফেরির মধ্যে ১২টি চলাচল করছে। এসব ফেরিতে যাত্রী, পণ্যবাহী গাড়ি, ব্যক্তিগত ছোটগাড়ি ও জরুরি সেবায় নিয়োজিত গাড়ি পারাপার করা হচ্ছে। যানবাহনের পাশাপাশি যাত্রীরাও ফেরিতে ওঠে পড়ছেন। তবে সড়ক পথে কিছুটা ভোগান্তি হলেও ঘরমুখী এসব মানুষ নৌপথে স্বস্তিতেই পারাপার হতে পারছে।
সোহেল হোসেন/আরএআর