তাহিরপুরের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
গত তিনদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সুনামগঞ্জ শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা নদীর পানি বেড়েছে। হাওর, জলাশয়ে পানি প্রবেশ করেছে প্রবল বেগে। এ কারণে নদীতে ঢল নেমেছে। ফলে নিচু এলাকার বাসিন্দারা পড়েছেন ভোগান্তিতে। ভারি বর্ষণে আউশ ধান ও বর্ষাকালীন সবজির জমি ছুঁই ছুঁই করছে ঢলের পানিতে। এছাড়াও সুরমা নদীর তীরবর্তী গ্রামের একাধিক যাতায়াত সড়ক ডুবে গেছে।
এদিকে পাহাড়ের পাদদেশের তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুরের বিভিন্ন সড়কে ওঠেছে পানি। এ কারণে তাহিরপুরের সঙ্গে জেলা সদরসহ সারাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কের বিশ্বম্ভরপুরের শক্তিয়ারখলা পার্শ্ববর্তী ১০০ মিটার সড়কের অ্যাপ্রোচের অংশ মঙ্গলবার সকাল থেকেই কোমর সমান পানিতে ডুবেছে।
বিজ্ঞাপন
তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ারপুর সড়কেও কোমর সমান পানি। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নের দুর্গাপুর মাজারের সামনের অংশেও হাঁটু সমান পানি। এ কারণে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে তাহিরপুরের।
উপজেলার বালিজুরির বাসিন্দা ফেরদৌস আহমদ জানান, নৌকা দিয়ে বালিজুরি থেকে শক্তিয়ারখলা আসতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভপুরের দক্ষিণ বাদাঘাটের দুই লাখেরও বেশি মানুষ। কিছু অংশ নৌকা দিয়ে এবং কিছু অংশ আসছে হেঁটে।
বিজ্ঞাপন
বিশ্বম্ভরপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমদ জানান, বৃষ্টি সীমান্তের এপারের (বাংলাদেশ অংশে) চেয়ে পাহাড়ে বেশি হয়েছে। এ কারণে ভারতের মেঘালয়ের পাদদেশের বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর অংশে পাহাড়ি ঢল বেশি নেমেছে। মঙ্গলবার বিকেলে বৃষ্টি থামলেও পাহাড়ি ঢলের আশঙ্কা কমেনি।
তিনি জানান, সড়কের তিনটি অংশে পানি ওঠায় পথচারীরা কষ্টে পড়েছেন। মানুষের বিপদের সময় একশ্রেণির মানুষ অতিরিক্ত টাকা রোজগারের ধান্দায় লেগেছে। শক্তিয়ারখলা ১০০ মিটার সেতুর পূর্ব পাশের অ্যাপ্রোচ সড়ক থেকে ভাটিপাড়া স্কুলের সামনে নামিয়ে দিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়া গুনেছে কিছু নৌকাওয়ালা। আবার মোটরসাইকেলে পারাপার করে ৪০ থেকে ৫০ টাকা দাবি করেছে। এসব তদারকিও কেউ করছে না।
তিনি বললেন, গত দুইদিন দক্ষিণের বাতাসে বৃষ্টি পাহাড়ের দিকে ঠেলেছে এবং ওখানে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। এ বৃষ্টির পানি নিচের দিকে নেমে সুনামগঞ্জের নদ-নদীতে পানি বেড়েছে। মঙ্গলবার বিকেলেও দক্ষিণের বাতাস বেশি ছিল জানিয়ে তিনি বললেন, পাহাড়ি ঢল রাতেও নামতে পারে এবং সুনামগঞ্জের নদী নদীতে পানি বেড়ে নিম্মাঞ্চলে পানি ঢুকতে পারে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান জানান, বুধবার দুপুর ১২টার রেকর্ড অনুযায়ী সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি সমতল বিপৎসীমার ২০ সে.মি. নিচ দিয়ে এবং যাদুকাটা নদীর পানি সমতল বিপদসীমার ৭৯ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় লাউড়েরগড় ও সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যথাক্রমে ২০০ মি. মি. ও ১৭৫ মি.মি.।
অপরদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২২১ মি.মি.। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী ভারি বর্ষণের এ ধারা আগামী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এর ফলে আগামী দু-একদিনের মধ্যে সুরমা নদীর পানি সমতল বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
এ বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বললেন, ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে যাদুকাটা ও রক্তি নদীর পানি বেড়েছে। এই দুই নদীর পানি কূল উপচে আশপাশের এলাকা প্লাবিত করেছে। এ কারণে তাহিরপুরের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সাইদুর রহমান আসাদ/এমএএস