এবারও লড়ছেন চা বিক্রেতা হাবুল খান
কাউন্সিলর প্রার্থী হাবুল খান
নেত্রকোনার কেন্দুয়া পৌরসভা নির্বাচনে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে গাজর প্রতীক নিয়ে এবারও লড়ছেন বর্তমান কাউন্সিলর চা বিক্রেতা হাবুল খান। আগামী ১৬ জানুয়ারি ইভিএম পদ্ধতিতে এ পৌরসভার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
নির্বাচন সামনে রেখে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন চা বিক্রেতা হাবুল খান। এর আগে ২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনেও তিনি একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হয়ে গাজর প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়েছিলেন।
বিজ্ঞাপন
এই ওয়ার্ডে হাবুল খান ছাড়াও সাবেক কাউন্সিলর গোলাম জিলানী (পানির বোতল), আলয় রায় (পাঞ্জাবি), সবুজ মিয়া (উট পাখি) ও হলুদ মিয়া (ডালিম) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলে উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে।
চা বিক্রেতা পৌর কাউন্সিলর হাবুল খানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমার বয়স ৪৬ বছর। কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণেই তার চায়ের দোকান। কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই তিনি চা বিক্রি করতেন। ভালো ব্যবহার, সততা ও কর্মনিষ্ঠা দেখে ২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনে তাকে প্রার্থী করে বিজয়ী করেন এলাকার মানুষ।
বিজ্ঞাপন
কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে হাবুল খানও ওয়ার্ডবাসীর প্রত্যাশা পূরণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। নিজের চায়ের দোকানটিকেই তিনি ব্যবহার করেছেন কাউন্সিলের কার্যালয় হিসেবে। চা দোকানে বসেই ব্যবসার পাশাপাশি ওয়ার্ডবাসীর সঙ্গে নিয়মিত কুশল বিনিময়সহ সবার পরিবারের খোঁজ-খবর নিয়েছেন এবং তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনেছেন সব সময়।
তবে চা বিক্রি করায় এলাকার অনেকের উপহাসও শুনতে হয়েছে তাকে। কিন্তু তা কখনও তিনি গায়ে মাখেননি। সৎভাবে জীবন চালাতেই তিনি কাউন্সিলর হয়েও চা বিক্রি করে যাচ্ছেন।
হাবুল খান তার অতীতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, জন্মের কয়েক মাস পরই বাবাকে হারাই। সংসারের টানাপোড়েন দেখে বড় হয়েছি। লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি। মাত্র ১০ বছর বয়সে দূর সম্পর্কের এক চাচা আব্দুর রউফের চায়ের দোকানে কাজ শুরু করি। সেখানে ৮ বছর বিনা বেতনে চাকরি করার পর চাচা দোকানের দায়িত্ব আমার হাতে তুলে দেন।
সেই থেকে এই চায়ের দোকান আমার। দীর্ঘদিন ধরে চায়ের দোকান করায় এলাকার সবার সঙ্গে একটা ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। এলাকার মানুষ নিজেদের বিভিন্ন সমস্যার কথা আমার সঙ্গে আলোচনা করতেন। আমিও তাদের পাশে থাকতে ও সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করতাম। এরই মাঝে ২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনে সবাই আমাকে কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের কথা বলেন। প্রথমে লজ্জা ও সংকোচ পেলেও ওই ওয়ার্ডের সচেতন মহলের সাহসে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হই।
কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর অনেকেই চা দোকান ছেড়ে দিতে বলেছিলেন, কিন্তু আমি ছাড়িনি। দোকান ছেড়ে দিলে সংসার চলবে কীভাবে? সৎভাবে চলতে হলে দোকান আমার করতেই হবে। কারণ এই চায়ের দোকান করেই আমি কাউন্সিলর হয়েছি।
এবারের নির্বাচন বিষয়ে জানতে চাইলে হাবুল খান বলেন, গত পাঁচ বছরে চেষ্টা করেছি মানুষের উপকার করার জন্য। জানি না কতটুকু করতে পেরেছি। তবে আশা করি ভোটাররা আবারও আমাকে বিজয়ী করবেন।
এদিকে কয়েকজন সচেতন ভোটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চা বিক্রেতা পৌর কাউন্সিলর হাবুল খানের কার্যক্রমে এলাকাবাসী সন্তুষ্ট। তাই এবারও তিনি বিজয়ী হবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।
এমএসআর