রামপালে যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন হাট-বাজার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। অব্যবহৃত মালামাল ও বর্জ্য ফেলার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় যত্রতত্র ময়লা ফেলায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকিও রয়েছে।

তবে রামপাল উপজেলায় স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাধন কুমার বিশ্বাস।

রামপাল সদরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পুরাতন ডাকবাংলো এলাকার পাশেই প্লাস্টিকের বোতল, বিভিন্ন পণ্যের অব্যবহৃত মোড়কসহ নানা ধরনের ময়লার স্তূপ। গন্ধও রয়েছে। রামপাল-পেরিখালী খেয়াঘাটে প্রবেশ পথেও রয়েছে পলিথিনের মোড়কসহ বিভিন্ন বর্জ্যের স্তূপ।

শুধু এই দুই স্থানে নয়— উপজেলার নতুন ডাকবাংলো, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র, বাসস্ট্যান্ডের আশপাশের এলাকা, প্রাণিসম্পদ দপ্তর সংলগ্ন বাজার, পেড়িখালীবাজার, ভাগাবাজার, গিলাতলাবাজার, চাকশ্রীবাজার, ফয়লাবাজারসহ বেশ কিছু বাজারে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনার স্তূপ রয়েছে। অনেক জায়গার বর্জ্য বৃষ্টির পানিতে সরাসরি নদী ও খালে গিয়ে পড়ছে। এতে নদীদূষণ ও নদীর নাব্য হ্রাস পাচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।

রামপাল সদরের লিটু রহমান, মোস্তাফিজ, শিহাব উদ্দিনসহ কয়েকজন বলেন, উপজেলায় ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। এ জন্য মানুষ যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ও প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলছেন। ময়লা ফেলতে ফেলতে এমন অবস্থা হয় যে পাশ থেকে হাটাও যায় না গন্ধে। অনেক সময় আমরা নিজেদের উদ্যোগে ময়লার স্তূপ ব্লিসিং পাউডার দিয়ে দেই।

রামপাল সদর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি শেখ আবু দাউদ বলেন, উপজেলার প্রধান বাজার হলেও আমাদের এখানে ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা না থাকলে মানুষতো ইচ্ছেতম ময়লা ফেলবে। ময়লা- আবর্জনা ফেলার জন্য ডাস্টবিন স্থাপন ও ডাম্পিংয়ের জন্য স্থান নির্ধারণের দাবি জানান তিনি।

রামপাল উপজেলা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন শেখ বলেন, একটা উপজেলা সদরে বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা নেই— এটা ভাবতে আমাদের অবাক লাগে। বর্জ্য যে শুধু গন্ধ ছড়ায় তা তো নয়। এটার ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়ছে। প্লাস্টিকের বর্জ্য আমাদের মারাত্মক ক্ষতি করছে।

রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুকান্ত কুমার পাল বলেন, বর্জ্যের মাধ্যমে মানুষের জীবন ধারণের জন্য সব থেকে বেশি প্রয়োজনীয় দুটি উপাদান পানি ও বায়ু দূষিত হয়। দূষিত হয় মাটিসহ সার্বিক পরিবেশ। বর্জ্যের ভাগাড়ে জন্ম নেয় মশা, মাছি ও অন্যান্য ক্ষতিকর জীবাণু— যা স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি করে কয়েকগুণ। সকলের উচিত সচেতন হওয়া ও নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।

রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাধন কুমার বিশ্বাস বলেন, উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ময়লা-আবর্জনা নিয়ে কিছুটা অব্যবস্থাপনা রয়েছে। আমরা উপজেলার বাজারগুলো ময়লা-আবর্জনামুক্ত করতে পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছি। প্রথমে আমরা উপজেলা সদরের যে বাজারটি রয়েছে, সেখানে প্রত্যেক দোকানিকে ময়লা ফেলার জন্য বিন দেওয়া হবে।

প্রতিদিন ওই বিন থেকে ময়লা সংগ্রহ করে রামপাল-পেরিখালী খেয়াঘাটের একটি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা হবে। প্রথম দিকে আমরা বর্জ্য পুড়িয়ে ধ্বংস করব। খুব শিগগির সদরের বাজারে আমরা এটি শুরু করব। এখানে সফলতা আসলে উপজেলার অন্যান্য বাজারেও এই পদ্ধতি চালু করা হবে। পরবর্তীতে বর্জ্য আধুনিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ব্যবহারের চেষ্টা করা হবে।

এমএসআর