করোনা হাসপাতালে রোগীর চাপ, রমেকে চালু হচ্ছে নতুন ইউনিট
রংপুরে ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালে নতুন করে রোগী ভর্তি বন্ধ রাখা হয়েছে। গড়ে প্রতিদিন ১২ জনের বেশি রোগী ভর্তি হওয়ায় হাসপাতালটিতে বর্তমানে কোনো শয্যা ফাঁকা নেই। সেখানে সংকটাপন্ন রোগীদের জন্যও মিলছে না নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) শয্যা। করোনা হাসপাতালে আইসিইউতে কোনো শয্যা ফাঁকা নেই জানিয়ে নোটিশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট একটি ওয়ার্ডে আলাদা করোনা ইউনিট চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছ। সেখানকার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে রোববার (০৪ জুলাই) থেকে নতুন এ ইউনিট চালু করা হবে। রংপুর বিভাগে হু-হু করে রোগী বাড়তে থাকায় এবং করোনা হাসপাতালে চাপ বেড়ে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (০৩ জুলাই) সন্ধ্যায় রংপুর ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এসএম নুরুন নবী ঢাকা পোস্টেকে রোগী ভর্তি বন্ধ রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। একই সঙ্গে হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা ফাঁকা না থাকার বিষয়টিও জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১০টি আইসিইউ শয্যা নিয়ে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালটি যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে মাত্র আটটিতে ভেন্টিলেটর সুবিধা রয়েছে। শুক্রবার রাতে সেখানে একটি শয্যা ফাঁকা থাকলেও শনিবার সকালে একজন মুমূর্ষু রোগী ভর্তি হওয়ায় সবগুলো শয্যা পূর্ণ হয়ে গেছে। বর্তমানে হাসপাতালটিতে কোনো আইসিইউ শয্যা ফাঁকা নেই। তবে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৯৫ রোগীর মধ্যে আরও ১৫-২০ জনকে আইসিইউতে নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
বিজ্ঞাপন
১০০ শয্যার রংপুর ডেডিটেকেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালে সরাসরি অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে ৯১টিতে। বাকি ৯টিতে গেল বছরেও অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে ৯৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। যাদের চারজন রয়েছেন অক্সিজেন সুবিধার বাইরে। সকালে দুই দফায় অক্সিজেন ফল্ট করায় আধা ঘণ্টার ব্যবধানে একজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে অতিরিক্ত রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এ ব্যাপারে রংপুর ডেডিটেকেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এসএম নুরুন নবী বলেন, রংপুর অঞ্চলে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও গাইবান্ধার করোনা রোগীদের এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু এখন যে হারে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে এবং সংক্রমিত রোগী বাড়ছে তাতে এখানে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে না। এ কারণে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আলাদাভাবে করোনা ইউনিট চালু করে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, গত বছরের ১৯ এপ্রিল হাসপাতালটি চালুর পর থেকে এখন (শনিবার) পর্যন্ত সেখানে ১ হাজার ৪৮৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ হাজার ২৪১ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ১৫৮ জন রোগীর। বর্তমানে হাসপাতালে যেসব সংকটাপন্ন রোগী আসছেন, তাদের বেশিরভাগের অক্সিজেন লাগছে। আইসিইউতে রাখাও জরুরি। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও আইসিইউ সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় আইসিইউ শয্যা পেতে রোগীর স্বজনদের ছোটাছুটি বেড়েছে। বিভাগের আট জেলায় দেড় কোটির বেশি মানুষের জন্য আইসিইউ শয্যা রয়েছে মাত্র ৪৬টি। এর মধ্যে রংপুর ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালে ১০টি (ভেন্টিলেটর ৮টি), রমেক হাসপাতালে ২০টি, দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছে ১৬টি শয্যা। মাত্র ৪৬টি আইসিইউ শয্যা দিয়ে পুরো বিভাগের আট জেলার দেড় কোটির বেশি মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার ঢাকা পোস্টকে জানান, করোনা ডেডিকেটেড আইসোলেশন হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা খালি নেই। অন্য শয্যাগুলো শনিবার দুপুরের মধ্যে পূর্ণ হয়ে গেছে। রোববার থেকে সেখানে রোগী ভর্তি করা সম্ভব হবে না। এ কারণে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডটিকে করোনা ইউনিট হিসেবে চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেখানে ৩১টি বেড রয়েছে। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে কয়েকটি হাসপাতালে অক্সিজেন সুবিধা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রমেক হাসপাতালে নির্মাণাধীন একটি ভবনে আরও একটি ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট চালুর ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষ দ্রুত আইসিইউ শয্যা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে পারলে সংকট কেটে যাবে।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আবু মোহাম্মদ জাকিরুল ইসলাম, বিভাগে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার দুটোই বেড়েছে। করোনা শনাক্তের শুরু থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত বিভাগে ১ লাখ ৬০ হাজার ৬০১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে ২৭ হাজার ৬৯২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৫৫১ জন। বিভাগে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর দিক থেকে দিনাজপুর ও রংপুরের পরই রয়েছে ঠাকুরগাঁও জেলা।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর