একটি সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে দুই পারের জনপদের যোগাযোগ ছিল বিচ্ছিন্ন। আর বর্ষা মৌসুমে তো স্থানীয় লোকজনের বাড়ি থেকে বের হওয়া ছিল মুশকিলের। এদিকে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা স্কুল-মাদ্রাসায় যেতে পারত না। এ নিয়ে তাদের মনে ছিল বেশ হতাশা। একদিন বিষয়টি ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনকে জানালে তিনি একটি সমাধানের আশ্বাস দেন। সেই লক্ষ্যে নিজের অর্থায়নে করে দিয়েছেন পাকা সেতু। এতে মিলন ঘটল দুই পারের।

হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল হলদিউড়া গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে দিয়ে সুতাং নদী বয়ে যাওয়ার কারণে হলদিউড়া ছিল বিচ্ছিন্ন। আর কোনো সেতু না থাকায় দুই পারের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ হতো অনেক কষ্টে। সম্প্রতি ব্যারিস্টার সুমন এই গ্রামের সেতুর মাধ্যমে তিনি তার ৩৫তম সেতুর উদ্বোধন করেন।

ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন ২০১৬ সাল থেকে সেতু বানানোর কাজ শুরু করেন। জেলার চুনারুঘাট উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে এ পর্যন্ত তিনি ৩৫টি সেতু তৈরি করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শানখলা ইউনিয়নে ৭টি, পাইকপাড়া ইউনিয়নে ৮টি, দেউরগাছ ইউনিয়নে ৫টি সেতু বানিয়েছেন। এ ছাড়া বাকি ৭টি ইউনিয়নে একটি-দুটি করে সেতু তৈরি করেছেন।

হলদিউড়া এলাকাবাসী জানান, তাদের দীর্ঘদিনে সমস্যার কথা এলাকার কৃতী সন্তান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনকে জানালে তিনি সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। এরপর তিনি তার ব্যক্তিগত উপার্জনের টাকা থেকে একটি পাকা সেতু করে দেন। তার দেওয়া সেতুতে গ্রামের দুই পাড় পূর্ব-পশ্চিম পাড়ের মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধ সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুগুলো দিয়ে গ্রামের লোকজন এপার থেকে ওপার যাচ্ছে। এ সময় তাদের মধ্যে ব্যাপক আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখা যায়। বিশেষ করে আগে নারী ও শিশুদের চলাফেরায় কষ্ট হলেও এখন তারা দিব্যি পার হচ্ছেন পাকা সেতু দিয়ে।

হলদিউড়া গ্রামের নারী জাহানারা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই পুল (সেতু) হওয়ার কারণে আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুল-মাদ্রাসায় সহজেই যাতায়াত করতে পারবে। তিনি আরও বলেন, আগে সাঁকো ছিল। এ কারণে অনেক সময় ছেলে-মেয়েরা দুর্ঘটনায় পড়ে আহত হতো। এখন তারা সহজেই পার হচ্ছে।

একই গ্রামের ছালেহা খাতুন বলেন, সেতু না থাকার কারণে আমরা গ্রাম থেকে বের হতে পারতাম না। এখন সেতু হওয়ার কারণে আমরা সহজেই বের হতে পারি। জরুরি প্রয়োজনে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যেতে পারি। এতে আমাদের সময় ও কষ্টের একটা সমাধা হয়েছে।

দিনমজুর সুমন মিয়া বলেন, সেতু না হওয়ার আগে আমরা স্থানীয়ভাবে বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে যাতায়াত করতাম। এতে অনেক ধরনের দুর্ঘটনা ঘটত। সাঁকো থেকে পড়ে অনেকেরই হাত-পা ভেঙে গেছে। তিনি বলেন, সেতু নির্মাণের জন্য ব্যারিস্টার সুমনকে আমরা গ্রামের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও দোয়া জানাই।

আগে আমাদের সাঁতরিয়ে নদী পার হতে হওয়া লাগত জানিয়ে কৃষক আবু কালাম মিয়া বলেন, এখন আর আমাদের কষ্ট হয় না। খুব সহজেই যোগাযোগ করা সম্ভব এখন। তিনি আরও বলেন, আমাদের এলাকায় একটি স্কুল স্থাপন করে দিলে এলাকায় শিক্ষার আলো জ্বলবে।

কথা হয় ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এলাকায় সেতু তৈরি করব, এমনটা আগে পরিকল্পনা ছিল না। প্রতিবারই আমাদের কাছে খবর আসছে সেতুর কারণে হলদিউড়ার ছাত্র-ছাত্রীদের অসুবিধা হচ্ছে। প্রথম দিকে আমি অল্প টাকা দিয়ে কাঠের সেতু তৈরি শুরু করি। এখন পাকা সেতু করে দিয়েছি। যখন শুনি মানুষ এক পার থেকে অপর পারে যাতায়াত করতে পারে না, তখনই সেতু বানানো শুরু করি। এভাবে করতে করতে কখন যে ৩৫তম সেতু হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি।

এসব সেতুর অর্থসংস্থান কীভাবে আসে, এমন প্রশ্নের জবাবে সুমন বলেন, আমি সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী। যখনই আমি কিছু টাকা রোজগার করি, তখই এলাকায় কিছু করি। এখন আমার নেশায় পরিণত হয়েছে এলাকাবাসীর জন্য সেতু তৈরি করা। তবে মানুষের দুর্ভোগের কথা জানতে পারলে সেতুর কাজ চলমান থাকবে বলে জানান ব্যারিস্টার সুমন।

এনএ