২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতাল

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের করোনা ইউনিটে অবাধে চলাফেরা করছেন রোগীর আত্মীয়-স্বজনরা। এতে করোনা সংক্রমণের হার বাড়তে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। সোমবার (৫ জুলাই) বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে হাসপাতালে করোনা রোগীর কয়েকজন আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা হয়।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সাধারণ রোগীর মতোই করোনা ইউনিটেও যেতে কোনো বাধা বা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়তে হয় না কাউকে। আবার বাইরে বেরিয়ে আসার পর কোনোরকম সুরক্ষাসামগ্রী ছাড়াই সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করছেন।

জেলা শহরের পিটিআই মাস্টারপাড়া মহল্লার মো. সোহেলের মা করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৩ দিন থেকে করোনা ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মায়ের চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কাজে দিনের বেশিরভাগ সময়ই থাকেন মায়ের কাছে।

তবে নিজের ব্যক্তিগত কাজে করোনা ইউনিট থেকে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বের হয়েছিলেন নিজের ব্যক্তিগত কাজে। তার সঙ্গে কথা হয় হাসপাতালের সামনে। 

সোহেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুধু ডাক্তার-নার্সদের ওপর সব ছেড়ে দিলেই তো হবে না। করোনা রোগীর পাশে পরিবারের লোকজন থাকা জরুরি। তাই মায়ের কাছে সার্বক্ষণিক থাকার চেষ্টা করছি। তাছাড়া শহরেই বাড়ি হওয়ার কারণে বিভিন্ন কাজের প্রয়োজনে বাইরে যাওয়া আসা করতে হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার হরিপুর এলাকার হালিমা খাতুন জানায়, আমার মা গত ৬ দিন থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিভিন্ন প্রয়োজনে বাড়ি থেকে আমার ভাই-বোন, ভাতিজা-ভাতিজি মাকে দেখতে আসছে। সর্তকতার সঙ্গে সবাই আসছে। কী করব বলেন, না আসলে মা মন খারাপ করছে। মা বলছে, আজ রোগী হয়েছি, তাই সবাই দূরে ঠেলে দিচ্ছে। তখন বাধ্য হয়েই আসতে হচ্ছে।

করোনা আক্রান্ত নানার কাছে প্রতিদিন সকালে আসেন কলেজছাত্র রাকিব (ছদ্মনাম)। রাতে নানির কাছে থাকে তার মা ও মামি। দিনের অন্যান্য সময়ে দেখতে ও খোঁজখবর নিতে করোনা ইউনিটে আসে পরিবারের সদস্যরাও।

রাকিব জানায়, আমরা যৌথ পরিবারের সদস্য। সবাই মিলে একসঙ্গে বসবাস করি। নানা পুরো পরিবারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি। তিনি এখন অসুস্থ হয়েছেন, তাই সবাই মিলে আবারও সুস্থ করার চেষ্টা করছি।

করোনা ওয়ার্ডে অবাধে যাওয়া আসা করার কারণে নিজের ও অন্য মানুষের জন্য হুমকি কি না, জানতে চাইলে রাকিব আরও জানায়, এতে আমরাও করোনার স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছি। কিন্তু তার (নানা) কথা ভেবে সবাই আসছি। কারণ বৃদ্ধ বয়সে আমরা এখানে থাকলে তিনি অনেকটা মনোবল ফিরে পাবেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে করোনা ইউনিটে দায়িত্বরত একজন চিকিৎসক ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বিষয়ে আমাদের অনেক সর্তক ও কঠোর অবস্থানে থাকা উচিত ছিল। কিন্তু রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের যাতায়াত দেখে মনে হয় এখানে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা চলছে। কোনো বাধা-বিপত্তি, ভয়-সর্তকতা ছাড়াই স্বজনরা করোনা আক্রান্ত রোগীর নিকট আসছেন এবং বাইরে চলে যাচ্ছেন।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মমিনুল হক জানান, হাসপাতালের লোকবলের অভাবে করোনা ইউনিটের গেটে নিরাপত্তাকর্মী বসিয়ে রোগীর স্বজনদের অবাধে চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। হাসপাতালের মূল ফটকে মাইকিং করে এ বিষয়ে সর্তক করা হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের। আগের থেকে মানুষ এখন বেশি সচেতন হয়েছেন বলে জানান তিনি।

বিষয়টি স্বীকার করে সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, অবাধে চলাফেরার বিষয়ে করোনা ইউনিটের স্বাস্থ্যকর্মীরা সচেতন রয়েছেন। তারা প্রবেশে বাধা দেয়। তারপরেও অনেকেই যাওয়া আসা করছেন।

সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন পর ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনায় কেউ মারা যায়নি। জেলায় সোমবার পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১১৪ জন। তবে নতুন করে করোনায় ২৭ আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ ঘণ্টায়। সংক্রমণের হার ১০ দশমিক ৩৮ শতাংশ। মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪২২ জন।

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের করোনা ডেডিকেটেড ইউনিটে ৭৫ জন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় ৪ জন রোগী ছাড়পত্র পেয়েছেন এবং নতুন করে আরও ৪ জন ভর্তি হয়েছেন। এখন পর্যন্ত করোনা ইউনিটে মোট ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৫৭৬ জন এবং সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন ৫০১ জন করোনা রোগী। 

এমএসআর