সকাল সোয়া ১০টা। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রের (আইসিইউ) সামনে একটি সাদা রঙের গাড়ি এসে থামল। অ্যাম্বুলেন্সের মতো দেখালেও আদতে সেটি মাইক্রোবাস। মরদেহ বহনে সেটি অ্যাম্বুলেন্সের মতো করা হয়েছে। পেছনের দরজা খুলে চালক গিয়ে দাঁড়ালেন একটু দূরে। ধরাধরি করে হাসপাতালের আইসিইউ থেকে বেরিয়ে এলেন দুই নারী।

কারও মুখে কথা নেই। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রু শুকিয়ে গেছে। কাঁথায় মোড়ানো মরদেহ নিয়ে আইসিইউ থেকে বেরিয়ে এল ট্রলি। ধরাধরি করে মরদেহটি অ্যাম্বুলেন্সে তুললেন ইস্রাফিল হক।

করোনা নিয়ে গত ২৭ জুন তারা হাসপাতালে এসেছিলেন। অবস্থা জটিল হওয়ায় পরে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করেছেন তার ভাই। কিন্তু পারেননি। সকাল ১০টার দিকে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

এরপর একে একে উঠলেন অন্য স্বজনরা। তারপর বন্ধ হয়ে গেল দরজাগুলো। যাওয়ার আগে ইস্রাফিল হক জানিয়ে গেছেন, মৃত ব্যক্তি তার বড় ভাই হামিদুল হক (৬০)। তারা কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বাসিন্দা।

করোনা নিয়ে গত ২৭ জুন তারা হাসপাতালে এসেছিলেন। অবস্থা জটিল হওয়ায় পরে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করেছেন তার ভাই। কিন্তু পারেননি। সকাল ১০টার দিকে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। কথা শেষ হতে না হতেই আইসিইউ এলাকা ছেড়ে দ্রুত ছেড়ে যায় অ্যাম্বুলেন্স।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সোমবার (৫ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে এই এক ঘণ্টায় হাসপাতালে করোনায় মারা যাওয়া একমাত্র রোগী হামিদুল হক।

একই সময়ে হাসপাতালে এসেছেন অন্তত ২২ জন রোগী। এর মধ্যে করোনা নিয়ে এসেছেন চারজন। আর করোনা উপসর্গ নিয়ে এসেছেন একজন। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন এবং ১৪ ওয়ার্ডে একজন চিকিৎসাধীন।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে জানা গেছে, সকাল ১০টার দিকে করোনা নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন মতিউর রহমান (২৭)। তিনি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম এলাকার বাসিন্দা। একই সময়ে করোনা নিয়ে হাসপাতালে আসেন নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নওগ্রাম উপজেলার বাসিন্দা মুন্নি (৩২)।

১০টা ২০ মিনিটে হাসপাতালে এসেছেন রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ছনগ্রাম এলাকার রিতা (৫০)। ১০টা ৩৫ মিনিটে ভর্তি নিয়েছেন রাজশাহী নগরীর বামনশিকড় এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম (৩২)। তিনিও এসেছেন করোনা নিয়ে। সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে এসেছে নগরীর সাধুরমোড় এলাকার বাসিন্দা আলেকজান (৫০)। তিনি এসেছেন করোনার উপসর্গ নিয়ে।

রোববার (৪ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে সোমবার (৫ জুলাই) সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ১৮ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। এ ছাড়া ১২ জন করোনা উপসর্গে মারা গেছেন। আর করোনা নেগেটিভ হয়েও অন্যান্য শারীরিক জটিলতায় মারা গেছেন একজন। তাদের মধ্যে ৮ জনের বাড়ি বিভাগে করোনার হটস্পট রাজশাহী জেলায়।

কঠিন অবস্থায় হাসপাতালে আসায় অনেকের আইসিইউ প্রয়োজন হচ্ছে। কিন্তু শয্যাসংখ্যা সীমিত হওয়ায় সেটি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী

এ ছাড়া নওগাঁর চারজন, নাটোরের তিনজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলার একজন করে মারা গেছেন। করোনা সংক্রমণ ও উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন তারা।

৪০৫ শয্যার করোনা আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন ৪৯৫ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৫৯ জন। একই সময়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৪৮ জন।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানিয়েছেন, কঠিন অবস্থায় হাসপাতালে আসায় অনেকের আইসিইউ প্রয়োজন হচ্ছে। কিন্তু শয্যাসংখ্যা সীমিত হওয়ায় সেটি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে ভর্তি প্রায় সব রোগীর জন্য অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। এমনকি যারা শয্যা না পেয়ে ভর্তি রয়েছেন, তাদেরও।

এনএ