সোমবার (৫ জুলাই) বেলা ১১টা ২০ মিনিট। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সদর উপজেলার মহারাজপুর ফিল্টেরহাট এলাকার প্রবাসী সাদিকুল ইসলামের মেয়ে তুনজেরা খাতুন দাঁড়িয়ে আছেন ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রের সামনে।

প্রবাসী বাবার বিদেশে যাওয়ার আগে দ্বিতীয়বারের টিকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে এসেছেন। টিকা কেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলেন টিকা দিতে পারবেন না তার প্রবাসী বাবা।

তুনজেরা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দ্বিতীয়বারের মতো আজ (সোমবার) সকালে আবারও বাবার টিকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে এসেছিলাম। আগেরদিনের মতো আজকেও তারা বলছেন, টিকা দেওয়া যাবে না। টিকা দিতে না পারলে বিদেশে যাওয়া হবে না বাবার। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৪ মাসের ছুটিতে এসে ৬ মাস পেরিয়ে গেছে। এখন কী করব? কিছু বুঝতে পারছি না।

টিকা কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ। তারা প্রবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্য। সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, কাতার থেকে এসে আটকে পড়ে আছি। কয়েকবার এসে ঘুরে ঘুরেও টিকা কবে পাব কিছুই বলতে পারছে না। এদিকে টিকা গ্রহণের সনদপত্র না থাকলে বিদেশে যেতে পারব না। 

৬ বছর সৌদি আরবে থাকার পর এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশে ফিরেছেন সদর উপজেলার বারোঘরিয়ার ইমাম হাসান। তিনি বলেন, এখন উভয় সংকটে পড়ে গেছি। ১ মাস থেকে ঘুরছি টিকা নেওয়ার জন্য। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীরা কিছুই বলতে পারছে না। এদিকে সৌদি অফিস থেকে অনেক আগেই ডাকছে।

টিকা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. এহেতেশামুল হক ঢাকা পোস্টকে জানান, ১০-১২ দিন থেকে প্রতিদিন ৮-১০ জন প্রবাসী টিকাদান কেন্দ্রে এসে ঘুরে যাচ্ছে। যেহেতু এখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, মেডিকেল কলেজ ও স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী, মেডিকেল স্টাফ এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কেউ নতুন করে টিকা গ্রহণ করতে পারছে না। সেহেতু প্রবাসীরা টিকা নিতে পারছে না।

সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে জানান, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রধান কার্যালয় ও জেলা কার্যালয়ে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন করার পর জেলা হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রে এসে টিকা নিতে পারবেন। কিন্তু এ বিষয়ে কেউ সচেতন নয় বা জানে না, তাই এই প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করে টিকা নিতে পারছে না। 

সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন পর ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনায় কেউ মারা যায়নি। জেলায় সোমবার পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১১৪ জন। তবে নতুন করে করোনায় ২৭ আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ ঘণ্টায়। সংক্রমণের হার ১০ দশমিক ৩৮ শতাংশ। মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪২২ জন।

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের করোনা ডেডিকেটেড ইউনিটে ৭৫ জন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় ৪ জন রোগী ছাড়পত্র পেয়েছেন এবং নতুন করে আরও ৪ জন ভর্তি হয়েছেন।

এমএসআর