৪৯ বছরেও মেলেনি বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি
কল্পনার বড় ভাই শেখর চন্দ্র দেব
স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পায়নি কল্পনা রানী দেব। পাকবাহিনীর পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে মারা যান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামের এই কিশোরী। বীরাঙ্গনার স্বীকৃতির জন্য তার পরিবার সর্বত্র ধরনা দিয়েও স্বীকৃতি মিলছে না।
সর্বশেষ গত ১০ অক্টোবর নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে বোনকে বীরাঙ্গনা স্বীকৃতি দেয়ার জন্য লিখিত আবেদন করেন কল্পনার বড় ভাই শেখর চন্দ্র দেব।
বিজ্ঞাপন
কল্পনার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় কল্পনা গোকর্ণ সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। একদিন সকালে স্কুলের পড়া তৈরি করছিল সে। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই পাকবাহিনী হিন্দুপল্লি ঘেরাও করে। আতঙ্কিত মানুষজন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছোটাছুটি শুরু করেন।
ওই সময় পাকহানাদার বাহিনীর সদস্যরা কল্পনার ঘরে জিজ্ঞেস করে সে হিন্দু না মুসলমান। কল্পনা নিজেকে হিন্দু পরিচয় দেয়ার পর তার চুল ধরে টেনে-হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যায় হানাদাররা। এ সময় কল্পনাকে ধর্মান্তরিত হতে বলা হয়। কিন্তু কল্পনা তাতে অস্বীকৃতি জানায়। একপর্যায়ে কল্পনা এক পাকসৈন্যকে থাপ্পড় মারে। এরপর কল্পনার ওপর অমানবিক নির্যাতন করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। পালাক্রমে কল্পনাকে ধর্ষণ করে তারা।
বিজ্ঞাপন
কল্পনার বড় ভাই শেখর চন্দ্র দেব আক্ষেপ করে বলেন, ‘পাকবাহিনীর পাশবিক অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আমার বোন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। ভারসাম্যহীন অবস্থায় দুই মাস পর মারা যায় সে। অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয়রা জানেন কল্পনার মৃত্যুর কারণ, কিন্তু কেউ কল্পনার বীরাঙ্গনা স্বীকৃতি দেয়ার জন্য এগিয়ে আসেনি’।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিজেও মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের জন্য কাজ করেছি। আগরতলা সীমান্ত পর্যন্ত যত বাঙ্কার ও মরিচা তৈরি করা হয়েছে, আমার পরামর্শে ৫১০ জন লোক নিয়ে তৈরি করি। একদিন বাঙ্কার তৈরির সময় পাকিস্তানি বাহিনী অতর্কিতে হামলা চালালে ডান হাতে গুলিবিদ্ধ হই। পরে আগরতলার জিবি হাসপাতালে ১১ দিন চিকিৎসার পর সুস্থ হই। কিন্তু ভারতীয় মুক্তিবার্তায় নাম লিপিবদ্ধ না করায় আমার নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নাম ওঠেনি।’
নাসিরনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবদুল কাদির বলেন, ‘আমি কমান্ডার থাকাবস্থায় কল্পনাকে বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি দেয়ার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু অন্যদের অসহযোগিতার কারণে সেটি হয়নি। পাকবাহিনীর পাশবিক নির্যাতনের কারণেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে কল্পনার মৃত্যু হয়েছে।’
নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমা আশরাফী বলেন, ‘বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে শেখর চন্দ্র দেবের করা আবেদন পাওয়ার পর কল্পনার নাম বীরাঙ্গনা হিসেবে প্রস্তাব করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি।’
এমএসআর