রিকশাচালক নাজু মামুদ (সাদা শার্ট পরিহিত)

‘স্যারোক কন হামার গাড়ি না ধরি, বাড়িত খাবার পৌঁছে দেউক। লকডাউন তো হামার জনতে না। করোনা ধরুক আর না ধরুক, গরিব তো এমনি মরে। হামার কাছে করোনার থাকি, প্যাটের ভোক (ক্ষুধা) বড় ভাইরাস। আজই ইকশা (রিকশা) না চালাইলে কাইল কী খামো, এটাই হামার চিন্তা। স্যারেরা কয়, বাইরোত ক্যানে? খাবার দ্যান, আস্তাত (রাস্তায়) ব্যাড়ামো (বের হওয়া) না।’ এভাবেই আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন রিকশাচালক নাজু মামুদ।

সোমবার (৫ জুলাই) কঠোর বিধিনিষেধের পঞ্চম দিনে রংপুরে সকাল থেকেই কড়াকড়ি অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিধিবহির্ভূতভাবে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে নগরের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার, সড়ক ও পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করেছে মহানগর পুলিশ।

এ সময় লাইসেন্সের নবায়নপত্র না থাকায় আটক করা হয় কিছু ব্যাটারিচালিত রিকশা। যার মধ্যে নাজু মামুদের রিকশাও ছিল। দুপুরে রংপুর নগরের জাহাজ কোম্পানি মোড়ে পুলিশের বিপত্তিতে আটকা পড়েন ওই রিকশাচালক। তখন তার চোখে মুখে ছিল হতাশার ছাপ। চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল কপালে। আটক হওয়া অনেক রিকশার জটলার মধ্যেও নিজের রিকশার হ্যান্ডেল ছাড়েননি নাজু মামুদ।

ঢাকা পোস্টকে এই রিকশাচালক বলেন, ‘মোর পকটোত তো মাস্ক আছিল। কিন্তু স্যারেরা ইকশার (রিকশার) কাগজপত্র না থাকায় আটকে দিলে। এ্যলা মহাজনোক ফোন করি যে কতা কইম (বলবো), সেই ফোনও তো নাই। হামার মতো গরিবের সঙ্গে এমন করি লাভ কী? ঘরের খাবার থাকলে আস্তাত (রাস্তায়) ব্যারাই নো হয়।’

রিকশাচালক নাজু মামুদের বয়স চুয়ান্ন বছর পেরিয়েছে। রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুরে বাড়ি। প্রতিদিন ভোরে রিকশা নিয়ে রংপুর নগরে আসেন। সন্ধ্যা হলেই আবার ফিরে যান। সারাদিনে যা রোজগার হয়, তা দিয়ে সংসার চালান। সংসারে বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও দুই প্রতিবন্ধী সন্তান রয়েছে। কিন্তু সংসারের বোঝা টানার মতো তার কেউ নেই। এ কারণে ভাড়ায়চালিত রিকশার ওপরই ভরসা তার।
 
পুলিশি চেকপোস্টে নাজু মামুদের মতো অনেকেরই রিকশা আটক করা হয়। বাদ পড়েনি মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক (বোরক), থ্রি-হুইলার সিএনজি। পুলিশ বলছে, কঠোর বিধিনিষেধ আওতামুক্ত অনেক হালকা ও ভারি যানবাহনের কাগজপত্র নেই। চেকপোস্টে তল্লাশির সময়ে অনেকেই গাড়ির লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে না পারায় মামলা দেওয়া হয়েছে।

মহানগর পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডিবি অ্যান্ড মিডিয়া) ফারুক আহমেদ ঢাকা পোস্টকে জানান, বিধিবহির্ভূতভাবে চলাচলরত বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইনে ৯৬টি মামলা দায়ের করা হয়। এতে ২ লাখ ৭২ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া ২২টি যানবাহন আটক ও রেকারিং করা হয়।

এমএসআর