বরিশালের উজিরপুর থানায় রিমান্ডে হত্যা মামলার আসামিকে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের ঘটনায় সার্কেল এএসপি, প্রত্যাহার করা দুই ওসি এবং অজ্ঞাত পরিচয়ের তিনজনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে সোমবার (৫ জুলাই) নির্যাতনের শিকার মিনতি বিশ্বাস এই মামলা দায়ের করেন।

একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সন্ধ্যায় বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন রেঞ্জ ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান।

তিনি বলেন, আদালত যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন সেভাবেই কার্যক্রম চলছে। তাছাড়া ওই ঘটনা তদন্তে এরইমধ্যে রেঞ্জ কার্যালয় থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে যারা দোষী হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উজিরপুর উপজেলার হারতা গ্রামের মৃত নারায়ণ চক্রবর্তীর ছেলে বাসুদেব চক্রবর্তীর সঙ্গে প্রেমের সর্ম্পক ছিল পাশের জামবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মিনতি বিশ্বাসের। ২৫ জুন (শুক্রবার) দুপুরে মোবাইলের কলের সূত্র ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান বাসুদেব চক্রবর্তী।

সন্ধ্যায় আর বাড়ি ফেরেননি। রাত ৩টার দিকে স্থানীয় চৌকিদার গৌতম বল্লভ বাসুদেব চক্রবর্তীর ভাই বরুণ চক্রবর্তীকে মোবাইলে জানান, মিনতি বিশ্বাসের বাড়ির উত্তর পাশে বাসুদেব চক্রবর্তীর মরদেহ পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় ২৭ জুন উজিরপুর থানায় ওই নারীর নাম উল্লেখ করে মামলা করেন বরুণ। অভিযোগ আনা হয় পরকীয়া প্রেমের সূত্রে বাসুদেব চক্রবর্তীর কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত না দিতে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর বাড়ির পাশে ফেলে রাখা হয়। মামলার সূত্র ধরে গ্রেফতার করা হয় মিনতি বিশ্বাসকে।

তবে অভিযুক্ত মিনতি বিশ্বাস আদালতকে জানিয়েছেন, মামলার আগেই ২৬ জুন তাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে আদালতে ২৮ জুন গ্রেফতার দেখায় থানা পুলিশ। এই দুদিন তাকে থানায় আটকে রাখা হয়েছিল। মামলা গ্রহণের পর থানায় এক নারী পুলিশ সদস্য লাঠি দিয়ে বেদম মারধর করেন তাকে। পরে উপস্থিত অন্য পুলিশ সদস্যরাও তাকে মারধর করেন।

তিনি আরও বলেন, আদালতে আবেদনের মাধ্যমে ২৯ জুন দুই দিনের রিমান্ডে নেয় তদন্তকারী পুলিশ পরিদর্শক মইনুল ইসলাম। ওইদিন তাকে থানায় নিয়ে রাখা হলেও মারধর করা হয়নি। ৩০ জুন সকালে তাকে তদন্ত কর্মকর্তা কক্ষে নিয়ে যৌন হয়রানি করেন। কিছুক্ষণ পরে এক নারী পুলিশ সদস্যকে ডেকে এনে তাকে পেটাতে থাকেন। নারী পুলিশ সদস্যের মারধর মনমতো না হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা নিজে ওঠে ১৫/২০ মিনিট মারধর করেন। এতে জ্ঞান হারান তিনি।

মিনতি বিশ্বাস আদালতকে আরও জানান, মারধরের সময়ে তদন্ত কর্মকর্তা বারবার বলেন, তার শেখানো কথা আদালতে বললে হত্যা মামলা থেকে (অভিযুক্ত নারী আসামি) মুক্তি পাবে। এমনকি হত্যাকাণ্ড ঘটানোর স্বীকারোক্তি দিতে বলেন। অন্যদিকে নির্যাতনে জ্ঞান হারালে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করায় পুলিশ।

মিনতি বিশ্বাস জানান, হাসপাতাল থেকে পুনরায় থানায় আনা হলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করতে বলা হয়। কিন্তু তিনি তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। তারপরও অনেক বুঝিয়ে দোষ স্বীকার করতে বলেন তদন্ত কর্মকর্তা। কিন্তু আদালতে হাজির করা হলে বিচারকের কাছে রিমান্ডে যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন আসামি।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমএসআর