সীমান্তবর্তী জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে দিনের পর দিন বেড়েই চলছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যা। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে কাজ করে যাচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় পর্যাপ্ত চিকিৎসার জন্য শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ব্যবস্থা করা হয়েছে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের। 

ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রাকিবুল আলম চয়ন সোমবার (৫ জুলাই) ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানুষ সচেতন না হলে এই সেবাও এক সময় কাজে দেবে না।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, করোনার প্রথম দিকে ৫০ শয্যা থাকলেও বর্তমানে সেই শয্যা বাড়িয়ে ২০০ শয্যার করা হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন ১৭৪ জন। এদিকে ঠাকুরগাঁও জেলায় এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৮৬৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৩৬৭ জন। মারা গেছেন ৯৫ জন।

করোনা ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীদের দেখাশুনার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে দুজন করে নার্স রয়েছেন। সেই সঙ্গে সকাল, দুপুর ও রাতে চিকিৎসকরা রাউন্ড দিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন।

হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা থাকায় অনেকটাই চিন্তামুক্ত রোগী ও তাদের স্বজনরা। তাদের দাবি, সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা থাকলেও সঠিক সময়ে যাতে কাজে লাগে। অক্সিজেনের অভাবে যাতে রোগীদের কোনো চিন্তা করতে না হয়।

হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন নবাব হোসেন। তার ভগ্নীপতি রফিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার হরিপুর থেকে হাসপাতালে এসেছি। করোনা পজিটিভ হলে আমার ভগ্নীপতি নবাব হোসেনকে এখানে ভর্তি করা হয়। তার অক্সিজেনের সমস্যা। দুই মিনিটও অক্সিজেন ছাড়া থাকতে পারেন না তিনি। বর্তমানে অক্সিজেন ভালো পাচ্ছি। তবে অক্সিজেন সেবা যাতে সব সময় পাই।

হাসপাতালে কোভিড ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন আব্দুল মজিদ। গত শুক্রবার করোনা পজিটিভ হয়ে ভর্তি হয়েছেন তিনি। তার ছেলে রাসেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাবাকে এখানে ভর্তি করা হয়েছে। পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাওয়া যাচ্ছে। আগের মতো ভোগান্তি তেমন নেই। তবে অনেক সময় এখানে কর্মরত নার্সেরা খারাপ ব্যবহার করেন। এখানে এসেছি চিকিৎসা নিতে। তাদের খারাপ আচরণ দুঃখজনক।

ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রাকিবুল আলম চয়ন ঢাকা পোস্টকে বলেন, উত্তরের জেলাগুলো সীমান্তবর্তী হওয়ায় এখানে করোনার আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। আমাদের জেলায় কোনো রোগীর যাতে অক্সিজেনের অভাব না হয় সেজন্য সদর হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা করেছি।

তিনি আরও বলেন, করোনার সংক্রমণ কমাতে না পারলে এবং জনগণ সচেতন না হলে এই ২০০ শয্যাও আমাদের জন্য কম হয়ে যাবে। এজন্য আমাদের মূল কাজটি হলো করোনা শনাক্তের হার কমাতে হবে। এটি তখনি সম্ভব হবে যখন মানুষ সচেতন হবে।

করোনা ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির বিষয়ে তিনি বলেন, একজন রোগী করোনা পজিটিভ হলেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। আমাদের জরুরি সেবা বিভাগে আগে আক্রান্তদের অক্সিজেন দেখছি। যদি দেখা যায় রোগীর অক্সিজেনের ঘাটতি রয়েছে তখন আমরা ওই রোগীকে ভর্তি করাচ্ছি। এছাড়া অন্যদের আমরা বাসায় আইসোলেশনের থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।

মো নাহিদ রেজা/ওএফ