কুষ্টিয়ার করোনা হাসপাতালে আরও ১৩ জনের মৃত্যু
কুষ্টিয়ায় করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। লকডাউনেও থেমে নেই মৃত্যুর মিছিল। সোমবার (০৫ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার (০৬ জুলাই) সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জন করোনায় এবং দুজন উপসর্গে মারা গেছেন। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এম এ মোমেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মারা যাওয়া ১৩ জনের মধ্যে চারজন সদর উপজেলার, কুমারখালীর দুজন, ভেড়ামারার দুজন, দৌলতপুরের তিনজন, মিরপুরের একজন ও খোকসার একজন রয়েছেন। সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
এদিকে ১ হাজার ২২১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪৩২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। জেলায় এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ১৯৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ২৬২ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ৯২৬ জন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় করোনা শনাক্তের হার ৩৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। নতুন করে শনাক্ত হওয়া ৪৩২ জনের মধ্যে কুষ্টিয়া সদরের ১০৯ জন, দৌলতপুরের ৭৩ জন, কুমারখালীর ৭৮ জন, ভেড়ামারার ১০২ জন, মিরপুরের ৩৬ জন এবং খোকসার ৩৪ জন রয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
এখন পর্যন্ত জেলায় ৬৬ হাজার ৭৮৯ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে ৬৪ হাজার ২০২ জনের। বাকিরা নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছেন।
বর্তমানে কুষ্টিয়ায় সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ১০ জন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২৬২ জন এবং হোম আইসোলেশনে আছেন ২ হাজার ৭৪৮ জন।
এদিকে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের ৪৮ জন চিকিৎসককে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ হাসপাতালে সংযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে কুষ্টিয়া মেডিকেল থেকে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা করোনা ডেডিকেটেড জেনারেল হাসপাতালে ২২ জন, মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ১৫ জন ও ঝিনাইদহ জেনারেল হাসপাতালে ১১ জন চিকিৎসককে সংযুক্তির আদেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে একযোগে ৪৮ চিকিৎসককে তিন হাসপাতালে সংযুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ অতিমারি সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলা এবং জনসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নিম্নে বর্ণিত বিসিএস (স্বাস্থ্য) কর্মকর্তাদের সংযুক্তিতে পদায়ন করা হলো। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপসচিব জাকিয়া পারভীন এ প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন। বুধবারের (০৭ জুলাই) মধ্যে তাদের পদায়নকৃত কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে ৯২ জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে ৪৩ জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। নতুন ২২ জন যোগ হওয়ায় বর্তমানে কুষ্টিয়া হাসপাতালে চিকিৎসকের সংখ্যা দাঁড়াল ৬৫ জন।
করোনা ডেডিকেডেট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন বলেন, করোনার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আরও চিকিৎসক প্রয়োজন। আমরা যা চাই, তা পাই না। এ ছাড়া যাদের জেনারেল হাসপাতালে কাজের জন্য সংযুক্ত করা হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই আগে থেকে এখানে কাজ করেন। শুধু নতুন কয়েকজনকে সংযুক্ত করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ দেলদার হোসেন বলেন, ৪৮ চিকিৎসককে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ জেনারেল হাসপাতালে সংযুক্ত করা হয়েছে। এটি জানার পর ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মৌখিক কথা হয়েছে। কয়েকজন চিকিৎসক আছেন, যারা আগে থেকেই কুষ্টিয়ার করোনা হাসপাতালে কাজ করছেন। তাদের অন্যত্র দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কুষ্টিয়া হাসপাতালে যে পরিমাণ রোগী ভর্তি, সেই তুলনায় চিকিৎসক কম। এ জন্য মেডিকেল থেকে চিকিৎসক অন্য জেলায় গেলে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হবে।
রাজু আহমেদ/এসপি