রাজশাহী মহানগরীতে প্রাণঘাতী করোনার সংক্রমণ ছাড়াল ১৫ হাজার। ২৪ ঘণ্টায় করোনা ধরা পড়েছে ২৫৩ জনের। এ নিয়ে শুধু নগরীতেই করোনা শনাক্ত দাঁড়াল ১৫ হাজার ১৭০ জন। মঙ্গলবার (৬ জুলাই) সকালে রাজশাহীর সিভিল সার্জন দফতর এই তথ্য জানিয়েছে।

তবে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, নগরীতে করোনা ধরা পড়েছে ৮ হাজার ৭৯২ জনের। র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হিসাবে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ হাজার ৩৮ জনে।

সংক্রমণের তথ্যে হেরফের থাকলেও সিটি করপোরেশন ও সিভিল সার্জন দফতর করোনায় মৃতের সংখ্যা জানিয়েছে অভিন্ন। গত ২৪ ঘণ্টায় নগরীতে করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন দুজন। একই সময়ে জেলায় প্রাণ হারিয়েছেন দুজন। এ পর্যন্ত নগরীতে ৯৯ জনসহ জেলায় প্রাণহানি ১৭৮ জনের।

এর আগে রাজশাহী নগরীতে করোনা ধরা পড়ে গত বছরের ১৫ মে। আর জেলায় করোনা শনাক্ত হয় এর প্রায় মাসখানেক আগে ১২ এপ্রিল।

জেলা সিভিল সার্জনের দফতর জানাচ্ছে, এ পর্যন্ত জেলায় করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ১৫৯ জনের। এর মধ্যে করোনা ধরা পড়েছে ১৮ হাজার ৮৩৬ জনের। রাজশাহী নগরীতে ৮৩ হাজার ৭৮৮ নমুনা পরীক্ষা করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৫ হাজার ১৭০ জনের।

এক দিনে নগরীর ও জেলার নয় উপজেলা মিলে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ হাজার ২৮০ জনের। এর মধ্যে করোনা ধরা পড়েছে ৩৪২ জনের। করোনা শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এই দিন নগরীতে ১ হাজার ২৮০ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা ধরা পড়েছে ২৫৩ জনের।

ঘরে ঘরে করোনা

সিভিল সার্জন দফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী নগরীর ৬ হাজার ৪৬৬ জন আইসোলেশনে রয়েছেন। এর বাইরেও জ্বর-সর্দিসহ করোনার উপসর্গ নিয়ে নিজ বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকেই। সেই হিসাবে প্রায় ঘরে ধরেই ছড়িয়ে পড়েছে করোনা সংক্রমণ।

গ্রামাঞ্চলে সংক্রমণের হার কম দেখাচ্ছে সিভিল সার্জন দফতর। তাদের হিসেবে, জেলার নয় উপজেলায় করোনা নিয়ে বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ১ হাজার ৬৬৯ জন। প্রতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে রয়েছেন আরও ২৬ জন।

তবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, করোনার চিকিৎসা নিতে আসা লোকজনের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দা। অনেকেই সংক্রমিত হয়েও সাধারণ জ্বর-সর্দি ভেবে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

অবস্থা চরমে পৌঁছানোর পর আসছেন হাসপাতালে। এর উল্টো চিত্র নগরীতে। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন নগরীর ৮ হাজার ৫৯৭ জন করোনায় আক্রান্ত। আর জেলার নয় উপজেলায় এই সংখ্যা মাত্র এক হাজার ৯২৬ জন।

রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম তালুকদার জানান, নগরীতে বর্তমানে করোনা নিয়ে নিজ বাড়িতে আসোলেশনে রয়েছে ৬ হাজার ৪৬৬ জন। কেউ প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে নেই। জেলায় আইসোলেশনে রয়েছেন এক হাজার ৬৬৯ জন।

জেলার নয় উপজেলায় প্রতিদিন দেড় থেকে ২ হাজার জনের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। গত এক দিনে নগরীর ও জেলার নয় উপজেলা মিলে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক হাজার ২৮০ জনের। এর মধ্যে করোনা ধরা পড়েছে ৩৪২ জনের। করোনা শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এদের অধিকাংশই নগরীর বাসিন্দা।

তবে নগরীর করোনা পরিস্থিতি ততটা ভয়াবহ নয় বলে দাবি করেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফএএম আঞ্জুমান আরা বেগম। তিনি জানিয়েছেন, সিভিল সার্জন দফতরের পরিসংখ্যান ত্রুটিপূর্ণ। করোনা নিয়ে সিটি করপোরেশন এলাকায় বর্তমানে এক হাজার ১৯৪ জন আসোলেশনে আছেন। সিভিল সার্জন দফতর নগরীর বাসিন্দা নন এমন লোকজনকেও তালিকায় অন্তর্ভক্ত করে।

তিনি আরও জানান, সোমবার (৫ জুলাই) নগরীতে ৬৩৫ জনের র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা ধরা পড়েছে ৬১ জনের নমুনায়। করোনা শনাক্তের হার ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। 

এছাড়া রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পিসিআর ল্যাবে ২৮২ জনের মধ্যে ৭৫ জন (২৬ শতাংশ) এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পিসিআর ল্যাবে ৩৭০ জনের মধ্যে ১১৬ জনের (৩১ শতাংশ) নমুনায় করোনা ধরা পড়েছে।

করোনা ধরা পড়াদের মধ্যে ১৯১ জনের ঠিকানা নগর এলাকা দেখানো হয়েছে। রাতেই তাদের তালিকা পেয়েছেন তিনি। পরে কলট্রেসিং করে তারা ১০৫ জনের অবস্থান পেয়েছেন নগরীতে। পরে তাদের নাম-ঠিকানা নিয়ে নগর স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি যান।

প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রতিদিন নগরীর আটটি পয়েটে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট হচ্ছে। এছাড়া দুটি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা লোকজনের। এর বাইরেও দুটি ভ্রাম্যমাণ টিম নমুনা পরীক্ষা করছে।

প্রতিদিন এক হাজার জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯ থেকে ১২ শতাংশের মতো করোনা ধরা পড়ছে। কিছুতেই এর নিচে নামছে না। এই পরিস্থিতিতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাগিদ দেন এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। 

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএসআর