১১ মাস পর প্রেমিকের বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে মিলল প্রেমিকার লাশ
গ্রেফতার আসামি সাহাবুদ্দিন আকন (ইনসেটে নিহত মুর্শিদা)
‘পুলিশ সহযোগিতা করলে ১১ মাস আগেই আমার মেয়েকে পাওয়া যেত। মামলার এতোদিন পর আসামি ধরা পড়ার পর আমার মেয়ের গলিত লাশ উদ্ধার হলো। আগে আসামি ধরা পড়লে হয়তো আমার মেয়েকে জীবিত পেতাম। পুলিশ ইচ্ছা করলেই আমার মেয়েকে জীবিত দিতে পারতো।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন নিহত মুর্শিদার মা মাহিনুর বেগম।
মাদারীপুরের ডাসার থানার পূর্ব বোতলা গ্রামে নিখোঁজের ১১ মাস পর প্রেমিকের বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে পাওয়া গেল প্রেমিকা মুর্শিদার (১৬) মরদেহ। শনিবার (৯ জানুয়ারি) রাত ৮টার দিকে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা তার মরদেহ উদ্ধার করে।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার ডাসার থানার পূর্ব বোতলা গ্রামের চাঁনমিয়া হাওলাদারের দশম শ্রেণী পড়ুয়া মেয়ে মুর্শিদা আক্তারের সঙ্গে একই গ্রামের মজিদ আকনের ছেলে সাহাবুদ্দিন আকনের প্রেমের সম্পর্ক হয়। এই সম্পর্কের সূত্র ধরেই গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মুর্শিদাকে বাড়ি থেকে চিকিৎসা করানোর কথা বলে নিয়ে যায়। এরপর নিখোঁজ থাকায় গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি মুর্শিদার পরিবার ডাসার থানায় একটি জিডি করে। এতে কোনো প্রতিকার না হওয়ায় গত বছরের ৪ মার্চ সাহাবুদ্দিনসহ পাঁচজনকে আসামি করে ডাসার থানায় একটি মামলা করেন মুর্শিদার মা মাহিনুর বেগম।
দীর্ঘদিন মামলার কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তরের আবেদন করে বাদী পক্ষ। পরে ১৮ ডিসেম্বর মাদারীপুর গোয়েন্দা পুলিশ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে। এরপর গত ৩০ ডিসেম্বর মামলার আসামি সাহাবুদ্দিন আকন আদালতে জামিন নিতে গেলে আদালত আসামিকে কারাগারে পাঠায়। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই তারিকুল ইসলাম আসামি সাহাবুদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। আদালত দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (৯ জানুয়ারি) বিকেলে সাহাবুদ্দিন হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততার বিষয় গোয়েন্দা পুলিশের কাছে স্বীকার করে এবং মরদেহ গুম করার কথাও স্বীকার করে। সাহাবুদ্দিনের দেয়া তথ্যমতে শনিবার রাত ৮টার দিকে সাহাবুদ্দিনের বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে মুর্শিদার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহতের মামা টিপু সুলতান বলেন, আমার ভাগ্নিকে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে নিয়ে যায় সাহাবুদ্দিন। এরপর দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার পর আমরা থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ অসহযোগিতা করে। পরে এক পর্যায়ে মামলা হলেও পুলিশ আসামি গ্রেপ্তার করেনি।
মুর্শিদা আক্তারের ছোট খালু বলেন, মুর্শিদা নিখোঁজ হওয়ার পরদিন মুর্শিদার মা মাহিনুর বেগম থানায় জিডি করেন। জিডিতে বলেন আমরা কাউকে সন্দেহ করি না, কেউ সন্দেহের তালিকায় নেই। তার কিছুদিন পর শাহাবুদ্দিন আকন পলাতক হলে মামলা করা হয়। মামলার পর থেকে আমরা অনেক বার মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সুফল পাইনি। পুলিশ কোনো আসামি গ্রেফতার করতে পারেনি। পরে গোয়েন্দা পুলিশ আসামি গ্রেফতার করে এবং লাশ খুঁজে বের করে।
নিহতের আত্মীয় মিরাজ তালুকদার বলেন, পরবর্তীতে মামলাটি ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিবি পুলিশের কাছে মামলা হস্তান্তরের পরে আসামি কোর্টে আত্মসমর্পণ করে। আসামি স্বীকারোক্তমূলক জবানবন্দি দেয়। সে মোতাবেক ডিবি পুলিশ আমার ভাগ্নির মরদেহ উদ্ধার হয়। ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত সাহাবুদ্দিন আকনসহ সকলের ফাঁসি চাই।
বালিগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মোল্যা বলেন, এটি অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দাবি করছি।
জেলা ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চৌধুরী রেজাউল করিম বলেন, পুলিশ সুপার স্যারের নিদের্শে আমরা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ একটি টিম শনিবার রাতে আসামি সাহাবুদ্দিন আকনের বাড়িতে যায়। এ সময় সেপটিক ট্যাংক ভেঙে তার নিচ থেকে মুর্শিদার মরদেহ উদ্ধার করি। মরদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার তথ্য উদঘাটনের জন্য আসামিকে আরো জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে।
এসপি