রাজশাহীর বাঘার আড়ানী পৌর মেয়র মুক্তার আলীর বাড়িতে অস্ত্র ও মাদক আছে– এমন তথ্য পুলিশের কাছে আগে থেকেই ছিল। তল্লাশিকালে পাওয়া গেছে অস্ত্র ও মাদক ছাড়াও কোটি টাকা। বুধবার (৭ জুলাই) দুপুরের পর নিজ দফতরের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন।

তিনি বলেন, মেয়র ও তার ছেলের কক্ষ থেকে মাদক পাওয়া গেছে। মেয়র, তার স্ত্রী ও ছেলের নামে মাদক আইনে মামলা হবে। আর আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া গেছে মেয়রের কক্ষেই। সেগুলোর বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। আমরা ধরেই নিচ্ছি, অস্ত্রের বিষয়ে তার স্ত্রী জানতেন।

পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন আরও বলেন, এ জন্য অস্ত্র আইনের মামলায় মেয়র ও তার স্ত্রী আসামি হচ্ছেন। এছাড়া তার কক্ষে যে নগদ টাকা ও সই করা চেক পাওয়া গেছে। এই টাকার উৎস ও গন্তব্য বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেননি মেয়রের স্বজনরা। এই জন্য পুরো টাকা জব্দ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, যাচাই-বাছাই শেষে আইনত যা করা দরকার আমরা তা করব। এর আগে বুধবার ভোররাত ৩টার দিকে আড়ানী পৌর এলাকার পিয়াদাপাড়া এলাকায় মেয়র মুক্তার আলীর বাসায় অভিযান চালায় বাঘা থানা পুলিশ।

ওই অভিযানে মেয়রের বাড়ি থেকে নগদ ৯৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা, মেয়রের স্বাক্ষর করা ১৮ লাখ টাকার দুটি চেক, চারটি ম্যাগাজিন ও ১৭ রাউন্ড গুলিসহ বিদেশি পিস্তল, পিস্তলের গুলির ৪টি খোসা, ওয়ান শুটার গান, দেশি বন্দুক, এয়ার রাইফেল এবং শটগানের ২৬ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। অভিযানে ১০ গ্রাম গাঁজা, ৭ পুরিয়া হেরোইন ও ২০ পিস ইয়াবাও পাওয়া গেছে।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে পৌর এলাকার জয়বাংলা মোড়ে বাড়িসংলগ্ন নিজের ওষুধের ফার্মেসিতে ছিলেন মনোয়ার হোসেন মজনু। নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক তিনি।

ওই সময় মদ্যপ হয়ে দলবল নিয়ে হামলা চালান মেয়র মুক্তার আলী। ভয়ে ওই শিক্ষক বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন। পিছু নিয়ে মেয়র ও তার সহযোগীরা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন। পরে মজনুকে মারপিট শুরু করেন হামলাকারীরা।

মজনুকে বাঁচাতে গিয়ে হামলার শিকার হন তার কলেজ পড়ুয়া ছেলে এবং স্কুলশিক্ষক স্ত্রী। এই ঘটনায় মধ্যরাতে থানায় অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী। এতে মেয়রসহ দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৩/৪ জনকে।

সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মেয়রের বাড়িতে পুলিশ অভিযানে যায়। কিন্তু তার আগেই পালিয়ে যান মেয়র মুক্তার আলী। পরে তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে নগদ টাকা, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়।

এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে মেয়রের স্ত্রী জেসমিন আক্তার (৪০), মেয়র মুক্তারের দুই ভাতিজা সোহান (২৫) ও শান্তকে (২৩)। তাদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।

উপস্থিত ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ মো. আশরাফুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সনাতন চক্রবর্তী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) ইফতেখায়ের আলম, এএসপি (গোদাগাড়ী সার্কেল) আসাদুজ্জামান, এএসপি (ডিএসবি ও চারঘাট সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত) রুবেল আহমেদ এবং বাঘা থানার ওসি নজরুল ইসলাম। 

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএসআর