মুন্সিগঞ্জে স্বর্ণ চুরির অপবাদ দিয়ে এক যুবককে হাত-পা বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধরের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (১২ জুলাই) সকালে মুন্সিগঞ্জ শহরের দক্ষিণ ইসলামপুরে এ মারধরের ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) দুপুরে গ্রেফতারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

অভিযুক্ত আওলাদ হোসেন মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। মারধরের ঘটনায় একইদিন রাতে ভুক্তভোগী যুবক মুরাদ হোসেন রনি বাদী হয়ে আওলাদসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। অপর অভিযুক্তরা হলেন- দক্ষিণ ইসলামপুর এলাকার মনির হোসেন ও কালাই হোসেন। 

এদিকে মারধরের ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এতে জেলাজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ ইসলামপুর এলাকার স্থানীয় মনির হোসেনের বাড়ি থেকে ৪ ভরি স্বর্ণ ও ২২ হাজার টাকা চুরি হয়। এ ঘটনায় সোমবার সকালে চুরির অপবাদে মনিরের প্রতিবেশী রনিকে বাড়ি থেকে ধরে আনেন কাউন্সিলর আওলাদ হোসেন, মনির হোসেন ও তার ভাই কালাই। পরে মনিরের বাড়ির উঠানে রনিকে হাত-পা বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধর করে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করেন কাউন্সিলর আওলাদ। তবে মারধরের পরও চুরির বিষয়ে অস্বীকার করেন রনি। পরে রনির ছোট ভাই থানা থেকে পুলিশ নিয়ে আসলে রনিকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এর মধ্যে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করা হলে রাতেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।

ভুক্তভোগী রনি বলেন, সকালে বাসায় এসে কাউন্সিলর আওলাদ জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে আমাকে মনিরদের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে আমাকে হাত-পা বেঁধে মারধর করে আর বলে- ‘তুই চুরি করছস স্বীকার কর।’  আমিতো স্বর্ণ নেই নাই, আমি কেন স্বীকার করব। পরে আমার ছোট ভাই পুলিশ নিয়ে আসলে আমাকে ছেড়ে দেয়। কারা যেন ফেসবুকে ভিডিও দিয়েছে। রাতে আবার পুলিশ আসলে আমি বাদী হয়ে কাউন্সিলর আওলাদ হোসেনসহ মনির হোসেন ও কালাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছি। আমাকে শুধু শুধু মারধর করেছে, আমি এর বিচার চাই। 

মারধরের বিষয়টি স্বীকার করে অভিযুক্ত কাউন্সিলর আওলাদ হোসেন বলেন, আমি রনিকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে আসিনি। মনিরদের বাড়িতে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে জানতে পেরে আমি সেখানে যাই। গিয়ে দেখি অনেক মানুষ সেখানে। ক্রেডিট নেওয়ার জন্য কৌশল অবলম্বন করে তাকে মেরে ছেড়ে দিছি । 
কাউকে মারধর করতে পারেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার ভুল হয়েছে। মারধরের আধিকার আমার নেই, আমি অনুতপ্ত। 

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মিনহাজ-উল-ইসলাম জানান, মারধরের ওই ঘটনায় মামলা হয়েছে। কালাই ও মনির নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

কোর্ট ইন্সপেক্টর মো. জামাল উদ্দিন জানান, দুপুরে গ্রেফতারকৃতদের আদালতে হাজির করা হলে মুন্সিগঞ্জ আমলি আদালত-১ এর বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শান্তি চন্দ্র দেবনাথ তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। 

ব ম শামীম/আরএআর