কঠোর বিধিনিষেধেও তিস্তা পাড়ে মানুষের ভিড়
তিস্তা পাড়ের চারটি পয়েন্টে গেলে বোঝার উপায় নেই দেশে করোনা পরিস্থিতি মহামারি আকার ধারণ করেছে। ঈদের ছুটি পেয়ে কঠোর বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে এসব পয়েন্টে পরিবার নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছেন অনেকেই। পয়েন্টগুলো হচ্ছে- হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ, লালমনিরহাট-রংপুর সড়কের প্রথম তিস্তা সড়ক সেতু, কুড়িগ্রামের ধরলা নদীর ওপর নির্মিত শেখ হাসিনা ধরলা সেতু ও কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা-মহিপুর এলাকার গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতু।
এসব সেতুতে মানুষের ভিড়ের কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি স্বাস্থ্যবিধির কোনো কিছুই মানা হচ্ছে না। তীব্র যানজটের করোনা সংক্রমণ ও বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। এছাড়াও তিস্তা নদীতে দ্রুত বেগে ছুটে চলা স্পিডবোট বা শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় এক রকম প্রতিযোগিতা দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (২৩জুলাই) লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার তিস্তা পাড়ের চারটি পয়েন্টে এসব চিত্র দেখা। ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে সেখানে দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী এমনকি বৃদ্ধদেরও মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে তিস্তা পাড়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন মহাসড়কের পয়েন্টে পুলিশ চেকপোস্ট থাকলেও শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ভটভটি কিংবা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে মাইক বাজিয়ে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে যাচ্ছে শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণীরা। এছাড়াও মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে পরিবার নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছেন অনেকেই। চেকপোস্টে কিছু প্রশ্নের মুখে পড়লেও ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই পুলিশ দেখে মাস্ক মুখে দিলেও কিছুক্ষণ পরেই আবার খুলে ফেলছেন।
বিজ্ঞাপন
সকালে তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় দর্শনার্থীদের ভিড় কিছুটা কম থাকলেও দুপুরে সেটি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। একেই অবস্থা গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতুতে।
লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম সড়কের ধরলা নদীর ওপর নির্মিত শেখ হাসিনা ধরলা সেতু। সেখানেও অনেক মানুষের ভিড় দেখা গেছে। সেখানে বসেছে দোকানপাট। বিভিন্ন খেলনা, বাঁশি, বেলুন, মাটির গাড়ি, খাবারের দোকান রয়েছে। এছাড়া নদীতে নৌকায় মানুষ ঘোরাঘুরি করছে।
তিস্তা তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা মিজান, আনোয়ারা বেগম, শাহিনুর ইসলাম বলেন, এভাবে লকডাউন চলাকালে তিস্তা- ধরলা পাড়ে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মানুষ পরিবার নিয়ে ঘোরাফেরা করলে করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশংকা রয়েছে। এসব মানুষের কারণে সেতুর ওপড়ে রাস্তায় ভিড় জমে অনেক মানুষ ঠিকভাবে গন্তব্যে যেতে পারছে না।
এদিকে তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা জানান, গতকাল তিস্তা ব্যারাজের উত্তর সাধুর বাজার পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু আজ মানুষ ও গাড়ির সংখ্যা কিছুটা কম। তবে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। তারা ছুটি পেয়ে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। এভাবে চললে করোনা আরও বেড়ে যাবে।
ঘুরতে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, অনেকদিন পর ঢাকা থেকে বাড়িতে এসেছি। পরিবারের সদস্যরা বাইরে ঘুরতে চেয়েছিল। তাই উপায় না পেয়ে তিস্তা পাড়ে বেড়াতে এসেছি। কিন্তু পুলিশের কড়াকড়িতে ভালোভাবে কোথাও যাওয়া যাচ্ছে না।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরজু মো. সাজ্জাত হোসেন বলেন, তিস্তাপাড়ে যেন মানুষ যেতে না তাই পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। তবে অনেকেই বিভিন্ন অজুহাতে পার হয়ে যাচ্ছেন। প্রথম দিনের লকডাউনের কারণে কড়াকড়ি করা হয়নি। তবে আগামীকাল থেকে কঠোর অবস্থানে থাকবে পুলিশ।
লালমনিরহাটের জেলা প্রসাশক আবু জাফর বলেন, কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। অনেকেই বিভিন্ন অজুহাতে বের হচ্ছেন। উপযুক্ত কারণ ছাড়া যারা বের হচ্ছেন তাদের জরিমানা গুনতে হচ্ছে। রাস্তায় আজ পুলিশ কম থাকলেও আগামীকাল থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য উপস্থিত থাকবেন।
নিয়াজ আহমেদ সিপন/আরএআর