পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়িতে দীর্ঘদিন ধরে তিলে তিলে গড়ে ওঠা পর্যটনশিল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা। গত চার মাসে তাদের অন্তত ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেল ইউনিট ব্যবস্থাপক এ কে এম রফিকুল আলম।

প্রতিবছর ঈদ-পরবর্তী সময়ে যেখানে পর্যটকদের ভিড় থাকলেও, গত দুই ঈদে করোনা রোধে লকডাউনের কারণে বন্ধ ছিল সব ধরনের পর্যটন কেন্দ্র। ফলে পর্যটন-সংশ্লিষ্টরা প্রতিনিয়ত গুনছেন ক্ষতির অঙ্ক।

খাগড়াছড়ির আলুটিলা গুহা, রিছাং ঝরনা, জেলা পরিষদ পার্কসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো পর্যটকে ঠাসা থাকলেও বর্তমানে পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় এখন সুনসান নীবরতা।

জানা গেছে, পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে অন্তত ২০ হাজার মানুষ জড়িত। আর এখানে পরিবহনের সঙ্গে জড়িত প্রায় ১৪০০ শ্রমিক। হঠাৎ পেশা বদল করলেও তেমন আয় করতে পারছেন না কেউ। অনেকে কোনো কাজ না পেয়ে যাপন করছেন বেকারত্ব। আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কষ্টে আছেন তারা। এদিকে বিনিয়োগ করা পুঁজি হারিয়ে অনেকে প্রায় নিস্ব। নতুন কোনো খাতে বিনিয়োগ করার মতো সামর্থ্যও তাদের নেই। 

গত বছরও করোনার কারণে পর্যটন ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এ বছর টানা লকডাউনের কারণে ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। হোটেল-রিসোর্ট বন্ধ থাকলেও সম্পদ ও সরঞ্জাম নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হচ্ছে। এতে স্টাফদের নিয়মিত বেতন-ভাতা দিতে হচ্ছে।

ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে সাজেক বিলাশ রিসোর্টের মালিক জ্ঞান জ্যোতি চাকমা বলেন, করোনার কারণে গত বছর পাঁচ মাস বন্ধ ছিল। এ বছরও ৪ মাস বন্ধ। গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার সুযোগ না পেতেই চলতি আবার লকডাউনে আমাদের ক্ষতি পাহাড়সমান। ক্ষতি পোষাতে না পেরে কর্মচারীদের ছাঁটাই করে দিয়েছি। কীভাবে এসব ক্ষতি পোষাব, ভেবে আমরা শঙ্কিত।

খাগড়াছড়ি বেম্বোসুট রেস্টুরেন্টের মালিক ছাদেক চাকমা জানান, পর্যটক এলে আমাদের এখানে প্রচুর বিক্রি হয়। কিন্তু করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে সব বন্ধ হয়ে রয়েছে। বন্ধের সময়ে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে ওঠার আগেই আবার ক্ষতির মুখে পড়েছি। আমাদের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কর্মচারীদের বেতন চালাতে হয়। এতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তাদের চাকরি থেকে বাদ দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। তাই তাদের বসিয়ে রেখে বেতন দিতে হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত ক্ষতির সংখ্যা বাড়ছে। 

খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেল ইউনিট ব্যবস্থাপক এ কে এম রফিকুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, খাগড়াছড়ি ও সাজেকে হোটেল-মোটেলের সংখ্যা দেড় শতাধিক। এসব হোটেলের রক্ষণাবেক্ষণ করতে অনেক ব্যয় হয়। গত চার মাসে খাগড়াছড়ি ও সাজেকে পর্যটন ব্যবসায়ীদের অন্তত ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। পর্যটন ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সরকারি প্রণোদনা চেয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

মো. জাফর সবুজ/এনএ