চাঁদপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জি এম ফজলুল হক। তিনি নিজ এলাকায় তৈরি করেছেন একটি রাজকীয় বাড়ি। যার নাম হক মহল। বাড়িটি দৃষ্টিনন্দন রাজ প্রাসাদের মতো হলেও এখন বাড়িটি দেখাশোনার জন্য থাকছেন একজন কেয়ারটেকার।

জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে চাঁদপুর শহরের বাবুরহাট এলাকার আশিকাটি ইউনিয়ন পরিষদের পাশে প্রায় ৭০ শতাংশ জমির ওপর দৃষ্টিনন্দন বাড়িটি (হক মহল) নির্মাণ করেন সাবেক এমপি জি এম ফজলুল হক। একটা সময় এ বাড়িতে বসে তিনি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সভা মিটিং করতেন। আত্মীয়-স্বজন আর নেতাকর্মীদের পদচারণে মুখরিত থাকত পুরো বাড়ি। তবে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে পরাজিত হয়ে ধীরে ধীরে রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন ফজলুল হক। বন্ধ হতে থাকে বাড়িতে আসা মানুষের সমাগম। 

এদিকে বেশ কয়েক বছর ধরে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন জি এম ফজলুল হক। পরিবারের লোকজন জানায়, তিনি খুবই অসুস্থ। অনেক সময় পরিবারের অনেককেই চিনতে পারেন না। অসুস্থ থাকায় বেশ কয়েক বছর তিনি হক মহলে আসেন না। তারপর থেকে পুরো বাড়িটিতে সুনসান নীরবতা। তবে বাড়িটি পাহারায় একজন কেয়ারটেকার রয়েছেন।

সরেজমিনে হক মহলে দেখা যায়, দীর্ঘদিন বাড়িতে কেউ না থাকায় সিঁড়ি ও দেয়ালে শেওলা জমেছে। পুরো মহলের চারপাশে ঝোপঝাড় দেখা গেছে। মহলের পেছনের বাগানে প্রবেশ করলে এক ধরনের ভূতুড়ে অনুভূতি কাজ করে। তালা দেওয়া দরজাগুলো যেন চিৎকার করে বলছে আমাদের খুলে দাও।

স্থানীয় ব্যবসায়ী রাসেল প্রধান বলেন, বাড়িটি সম্পর্কে অনেকেই জিজ্ঞেস করে আমাদের। প্রকৃত অর্থে আমরাও সঠিক তথ্য দিতে পারি না। বাড়িটি দেখতে খুব সুন্দর কিন্তু এখন কেউ থাকে না। বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এসে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে চলে যায়।

আশিকাটি ইউনিয়নের বাসিন্দা বৃদ্ধ মোখলেস বলেন, আমি বাড়িটি তৈরি করতে দেখিছি। জি এম ফজলুল হকের পছন্দের বাড়ি এটি। তখন তিনি এমপি ছিলেন, কত মানুষ আসত তার কাছে। এখন তিনিও আসেন না, বাড়িও খালি। শুধু একজন কেয়ারটেকার দেখাশোনা করে বাড়িটি। 

ফজলুল হক জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা জাকির হোসেন বলেন, জি এম ফজলুল হক বাড়ির সঙ্গেই একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। মহলটি যেমন সুন্দর, তেমনি পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটিও সুন্দর। বাড়িতে কেউ না থাকলেও তার তৈরি মসজিদে মানুষ নামাজ পড়তে পারছে। 

হক মহলের কেয়ারটেকার ইসহাক গাজী বলেন, আমি ২০ বছর ধরে এই মহলটি দেখাশোনা করে আসছি। এক সময় সবাই আসতেন, এখন তিনি অসুস্থ থাকায় কেউ আসে না। বছরে দুই একবার তার ছেলে কিংবা আত্মীয়-স্বজন এসে ঘুরে যান। জি এম ফজলুল হক সম্পর্কে কিংবা তার পরিবার সম্পর্কে আমাদের তথ্য দেওয়া নিষেধ রয়েছে। 

উল্লেখ্য, জি এম ফজলুল হক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯৬ সালের সপ্তম ও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় নির্বাচনে চাঁদপুর-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপির কাছে পরাজিত হন। তারপর থেকে রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন সাবেক এই সংসদ সদস্য। 

এসপি