ফেনীতে সরকারি প্রণোদনায় আবাদ হচ্ছে ৪ হাজার হেক্টর জমি
কৃষকের মাঝে বোরো ধানের হাইব্রিড বীজ বিতরণ করা হয়েছে
ফেনীতে গত বছরের তুলনায় এবার চার হাজার হেক্টর বেশি জমিতে বিভিন্ন রবি ফসল আবাদ করা হচ্ছে। সরকারি প্রণোদনা ও প্রদর্শনী বাড়ানোয়ে এ জেলায় ফেনীতে চলতি রবি মৌসুমে আবাদি জমির পরিমাণ বেড়েছে।
চলতি মৌসুমে বোরো সরিষা, ধান, গম, ভুট্টা, সূর্যমুখী, চিনাবাদাম ও শীতকালীন সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলার ১৩ হাজার ৫০০ কৃষকের মাঝে ৪৫ লাখ ১৪ হাজার টাকার বীজ ও সার এবং ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০ হাজার কৃষকের মাঝে বোরো ধানের হাইব্রিড বীজ বিতরণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
যেকোনো ফসল আবাদের জন্য রবি মৌসুমে সেচের প্রয়োজন পড়ে। তাই সেচের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক কৃষক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও চাষাবাদ করতে পারছেন না। তা ছাড়া কোনো কোনো বছর নভেম্বর ও ডিসেম্বরে অতিবৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা রবি মৌসুমে জমি চাষ করেন না। সরকার প্রণোদনা দিলেও সেচব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, ফেনীতে ১৩৪ কৃষি ব্লকে ৬৯ হাজার ৫৫২ হেক্টর চাষাবাদ যোগ্য জমি রয়েছে। এর মধ্যে রবি মৌসুমে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৪৯ হাজার ৭৯১ হেক্টর। কিন্তু নানা জটিলতায় কৃষকরা রবি মৌসুমে অনেক জমি অনাবাদি রেখে দেন। গত মৌসুমে জেলায় ২৯ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়। প্রণোদনা ও প্রদর্শনী পেয়ে এবার তা বেড়ে ৩৩ হাজার ৮৫৫ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি প্রণোদনা অব্যাহত থাকলে আগামী রবি মৌসুমে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৪৯ হাজার হেক্টরে গিয়ে দাঁড়াবে।
বিজ্ঞাপন
কৃষকরা বলছেন, যেকোনো ফসল আবাদের জন্য রবি মৌসুমে সেচের প্রয়োজন পড়ে। তাই সেচের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক কৃষক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও চাষাবাদ করতে পারছেন না। তা ছাড়া কোনো কোনো বছর নভেম্বর ও ডিসেম্বরে অতিবৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা রবি মৌসুমে জমি চাষ করেন না। সরকার প্রণোদনা দিলেও সেচব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে।
কৃষি বিভাগ জানায়, ফেনীতে ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৮৪ পরিবারের মধ্যে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২০টি পরিবার কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে ৬৪ হাজার ৮৭৮টি ক্ষুদ্র ও ৫৮ হাজার ৭২টি প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষি পরিবার রয়েছে। এসব পরিবারের বেশির ভাগ কৃষকই অসচ্ছল ও দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করেন। রবি মৌসুমে ফসল আবাদে খরচ বেশি পড়ে। এ জন্য গত বছরগুলোয় অনেক কৃষক চাষাবাদ থেকে বিরত থাকতেন। কিন্তু এবার প্রণোদনা ও প্রদর্শনী পেয়ে তারাও আবাদে ফিরেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিঠুন ভৌমিক জানান, চলতি রবি মৌসুমে বোরো, গম, ভুট্টা, সরিষা, সূর্যমুখী, চিনাবাদাম, মুগ চাষাবাদের জন্য ফেনীতে সাড়ে ১৩ হাজার ৫০০ কৃষকের মাঝে ৪৫ লাখ ১৪ হাজার টাকার বীজ ও সার বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬ লাখ ৪ হাজার টাকা ব্যয়ে এক হাজার বিঘা জমিতে বোরো আবাদের জন্য এক টন বীজ ও ২০ টন সার বিতরণ করা হয়েছে।
সরকার দেশের প্রতিটি আবাদযোগ্য জমি উৎপাদনের আওতায় আনতে নানামুখী প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে কৃষকদের নানা প্রণোদনা দিয়ে অনাবাদি জমি আবাদে ফেরানোর চেষ্টা করছে। ফেনীতে এক ফসলি জমিকে দুই ফসলি দুই ফসলি জমিকে তিন ফসলি জমিতে রূপান্তর করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, জেলা প্রশাসক, ফেনী
ফেনী সদর উপজেলার কাজীরবাগ ইউনিয়নের কৃষক মো. আবদুল জানান, প্রায় এক যুগ ধরে তার বাড়ির পাশের তিন বিঘা জমিতে রবি মৌসুমে কোনো চাষাবাদ হতো না। কিন্তু এবার এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষাবাদের জন্য তিনি বিনা মূল্যে সরকারি বীজ ও সার পেয়েছেন। তাই নিজ উদ্যোগে তিন বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন।
ফেনী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বিথী জানান, তালিকা প্রণয়ন করে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। তালিকা প্রস্তুতকালে প্রকৃত চাষিদের নির্বাচন করতে পারায় গত বছরের তুলনায় এবার আবাদি জমির পরিমাণ বেড়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক তোফায়েল আহমদ চৌধুরী বলেন, উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহী করে ফসল উৎপাদন বাড়াতে সরকার ফেনীসহ সারা দেশে বিনা মূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করেছে। এ ছাড়া পাঁচটি জেলা কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনী স্থাপনসহ নানা কার্যক্রমে জেলায় এক ফসলি জমিকে দুই ফসলিতে রূপান্তর ও দুই ফসলি জমিকে তিন ফসলি জমিতে রূপান্তর করার চেষ্টা চলছে।
জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, সরকার দেশের প্রতিটি আবাদযোগ্য জমি উৎপাদনের আওতায় আনতে নানামুখী প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে কৃষকদের নানা প্রণোদনা দিয়ে অনাবাদি জমি আবাদে ফেরানোর চেষ্টা করছে। ফেনীতে এক ফসলি জমিকে দুই ফসলি দুই ফসলি জমিকে তিন ফসলি জমিতে রূপান্তর করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
এনএ