রংপুর অঞ্চলের দেড় কোটির বেশি মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতাল। কিন্তু অতিমারি করোনার দাপটে কোণঠাসা সেখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা।

বর্তমানে হাসপাতালে রোগী ভর্তির চাপ বেড়েছে। দিন দিন চাহিদাও বাড়ছে অক্সিজেনের। সঙ্গে হাসপাতালে পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বেশির ভাগ মেশিন বিকল হওয়াতে বেড়েছে ভোগান্তি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রমেক হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় প্রয়োজনীয় বেশির ভাগ মেশিন নষ্ট হয়ে আছে। এর মধ্যে সিটি স্ক্যান ও এমআরআই মেশিন দুই বছরের অধিক সময় ধরে বিকল। দেড় বছর ধরে এনজিওগ্রাম মেশিনটিও নষ্ট। কার্ডিওলজি বিভাগে প্রেস মেকার বসানো পিসিআই, এনজিওগ্রাম মেশিনও অচল। 

আইসিইউ, সিসিইউ ও ডায়ালাইসিস ইউনিটে প্রোটেবল এক্স-রে মেশিন, ইকো মেশিন, আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন নেই। আইসিইউ, সিসিইউ কক্ষে আধুনিক বেডের ব্যবস্থা নেই। এখন রোগীদের চাপ বাড়াতে নতুন করে ভাবাচ্ছে অক্সিজেন চাহিদা।

চিকিৎসাপ্রত্যাশীদের অভিযোগ, হাসপাতালের ভেতরে জরুরি প্রয়োজনের কোনো পরীক্ষানিরীক্ষার করার সুযোগ নেই। সব পরীক্ষানিরীক্ষা বাইরে থেকে করাতে হয়। এতে দুস্থ মানুষ অর্থাভাবে বেশির ভাগ সময়ে বিপাকে পড়ছেন। শুধু মেশিনই নষ্ট নয়, এখানকার অক্সিজেন সেবাও ভোগান্তিতে ফেলছে।

জানা গেছে, দুই যুগেরও বেশি পুরাতন পাইপ লাইনগুলো থেকে এখন নিরবচ্ছিন্নভাবে অক্সিজেন সরবরাহ হচ্ছে না। এতে প্রায়ই অক্সিজেনের অভাবে রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

অক্সিজেন সরবরাহের দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরা বলছেন, হাসপাতালের পাইপ লাইনগুলো পুরাতন হয়ে যাওয়ায় মাঝে মধ্যে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে নিরবচ্ছিন্নভাবে অক্সিজেন সুবিধা পাচ্ছেন না রোগীরা।
 
নাম প্রকাশের শর্তে হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিদিন শত শত রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। অনেকে উপায় না পেয়ে এখানে চিকিৎসাসেবা পেতে আসেন। হাসপাতালের বেশির ভাগ চিকিৎসক এখন অনিয়মিত। শুধুমাত্র ইন্টার্নদের উপস্থিতি ঠিক থাকায় রোগীরা একটু হলেও সেবা পাচ্ছেন।

অভিযোগ উঠেছে, প্রতি দিন হাসপাতালে অন্তত ৫-৮ জনের মৃত্যু হচ্ছে। যাদের বেশির ভাগ রোগীর মধ্যে করোনার উপসর্গ রয়েছে। তবে উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের হিসাবে ধরছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। অক্সিজেনের অভাব ও চিকিৎসকের কাছ থেকে সেবা পাওয়ায় বিষয়ে গণামাধ্যমের কাছে হাসপাতালের কেউ মুখও খুলছেন না। যেন হাসপাতাল জুড়ে চিকিৎসাসেবা নিয়ে লুকোচুরি খেলা চলছে।

অক্সিজেনের অভাবে রোগী মৃত্যুর ব্যাপারে মন্তব্য না করে হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেজাউল ইসলাম জানান, নিরবচ্ছিন্নভাবে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক রাখতে কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালে আরও ১০ হাজার লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনের কাজও এগিয়ে চলছে।

তিনি আরও জানান, অনেকগুলো মেশিনপত্র নষ্ট হয়ে আছে। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় মেশিনপত্র বিকল হওয়াতে রোগীদের কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।  

এদিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় মেশিন ও আধুনিক বেড জরুরি ভিত্তিতে সরবরাহের জন্য গত ২২ জুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরাবর লিখিত অনুরোধ জানিয়েছে রংপুর-৪ আসনের এমপি ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রংপুর বিভাগের আট জেলার সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসা সেবার জন্য আইসিইউ শয্যা রয়েছে মাত্র ৪৬টি। এর মধ্যে রংপুর ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালে ১০টি (সচল ৮টি), রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০টি এবং দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৬টি শয্যা রয়েছে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএসআর