ভিজিডি তালিকায় নাম থাকলেও চাল পান না মারুফা
মারুফা বেগম
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পূর্ব ধূলাসার গ্রামের জেলে হাসানের স্ত্রী মারুফা বেগম। ভিজিডির উপকারভোগী নারী হিসেবে ওয়ার্ড তালিকার ২৮ নম্বর ক্রমিকে তার নাম রয়েছে (কার্ড নম্বর ৫৫)। অথচ মারুফা এতদিন মহিলা ও শিশু অধিদফতর থেকে বরাদ্দ তার প্রাপ্য সুবিধা পায়নি। জানতেও পারেননি তালিকাভুক্ত উপকারভোগী তিনি।
স্থানীয় একজনের কাছে দুই দিন আগে জানতে পেরে অনেক অনুনয় বিনয়ের পর মেম্বারের কাছ থেকে তার নামের দুই মাসের ৫০ কেজি ভিজিডির চাল পেয়েছেন মারুফা। অথচ তার নামের চাল কয়েক মাস ধরে কাগজে কলমে বিতরণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এমনকি তার কার্ড এখনও দেয়নি মেম্বার। এছাড়া মারুফার স্বামীর নাম জেলে তালিকায় উপকারভোগী হিসেবে থাকলেও কখনো প্রাপ্য সুবিধা পাননি তিনি। এমনই অভিযোগ করেন মারুফা বেগম ও তার স্বামী জেলে হাসানের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ধূলাসার ২ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুর রবের মেয়ে রোজিনা, ইছাহাক মাতব্বরের মেয়ে মনিমুক্তা, ইউনুস বেপারীর মেয়ে হাসিনা, ওমর হাওলাদারের মেয়ে নাহিদ বেগম, সোবাহানের মেয়ে তানিয়া, মালেক বেপারীর মেয়ে রুবিনা বেগম ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকার স্মার্টকার্ড হোল্ডার।
বিজ্ঞাপন
আবার ধূলাসার ইউনিয়নের ভোটার তালিকায় তাদের নাম না থাকার পরও ২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার দুস্থ, অসহায় নারী হিসেবে ভিজিডি উপকারভোগী তালিকায় তাদের নাম রয়েছে ১, ৬, ৮, ১০, ১৫ ও ২৩ নম্বর ক্রমিকে। রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করলেও অথচ কাগজে কলমে প্রতি তারিখের ভিজিডি চাল গ্রহণ করেন তারা।
এছাড়া ১৪ নম্বর ক্রমিকের সুবিধাভোগী মাহমুদ মৃধা’র স্ত্রী সালমা বেগম। তালিকায় অভিভাবকের নামের স্থানে তার ভাই ফিরোজ আলমের নাম রয়েছে। ধূলাসার গ্রামে তার চারতলা বাড়ি আছে। ২০ নম্বর ক্রমিকের উপকারভোগী সামছুদ্দোহা মৃধার স্ত্রী তহমিনা। গ্রামে তার দুইতলা পাকা বাড়ি আছে।
২৫ নম্বর ক্রমিকের সুবিধাভোগী হাওয়া বেগমের স্বামী শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের একজন কর্মচারী। গ্রামে তার একতলা পাকা বাড়ি আছে। এই হচ্ছে মহিলা ও শিশু অধিদফতরের দুস্থ সাহায্য তহবিলের সুবিধাভোগীদের চিত্র। ধূলাসার ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে একই চিত্র। এর তেমন ব্যতিক্রম হয়নি সমগ্র উপজেলায়।
সুবিধাভোগীদের তালিকায় থাকা এসব দুস্থ, অসহায় নারীরা অনলাইনে আবেদনের পর জনপ্রতিনিধি এবং মহিলা ও শিশু অধিদফতরের ভিজিডি কমিটি এদের যাচাইবাছাই করে চূড়ান্ত করেছেন। আর এ ভিজিডি কমিটির সভাপতি ইউএনও। সদস্য সচিব উপজেলা মহিলা ও শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা।
আরও জানা যায়, কলাপাড়ার ধূলাসার ইউনিয়ন পরিষদে শুক্রবার (৬ আগস্ট) ভিজিডির ৩০০ তালিকাভুক্ত উপকারভোগীদের ২ মাসের চাল বিতরণ করা হয়েছে। ২ মাসের ৩০ কেজি করে ৬০ কেজি চালের বিপরীতে তারা চাল পেয়েছেন ৫০ কেজি করে।
বাকি ১০ কেজি চালের কোনো হদিস নেই। চাল বিতরণে তদারকি কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন উপজেলা দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকর্তা খালিদ মাহমুদ। বিষয়টি তারা উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে মুঠোফোনে অবগত করেছেন বলে জানিয়েছে সূত্রটি।
ধূলাসার ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড’র ইউপি সদস্য মোস্তাক বলেন, ‘মারুফা বেগম ভিজিডি চাল পেয়েছে। তার স্বামী হাসানও চাল পেয়েছে। এছাড়া রোজিনা, মনিমুক্তা, হাসিনা, নাহিদ বেগম, তানিয়া, রুবিনা ধূলাসার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তারা নিজেরাই তাদের ভিজিডি চাল নেয়।’
ধূলাসার ইউপি চেয়ারম্যান আ. জলিল মাস্টার বলেন, ‘তালিকাভুক্তরা সবাই দুস্থ ও অসহায় নারী। শুক্রবার তাদের প্রত্যেককে দুই মাসের ৬০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। কাউকে চাল কম দেওয়া হয়নি।’
ধূলাসার ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিজিডি’র তদারকি কর্মকর্তা উপজেলা দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকর্তা খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘আমার উপস্থিতিতে ভিজিডি উপকারভোগী দুস্থ, অসহায় নারীরা নিজেরা এসে স্বাক্ষর করে তাদের চাল নেয়। চাল বিতরণে অনিয়ম হয়নি।’
ভিজিডি উপজেলা কমিটির সদস্য সচিব, উপজেলা মহিলা ও শিশু অধিদফতরের কর্মকর্তা তাসলিমা বেগম বলেন, ‘অনলাইনে আবেদনের পর দুস্থ, অসহায় সাহায্য তহবিলের উপকারভোগীদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। উপকারভোগী তালিকায় কোনো ব্যত্যয় থাকলে সংশোধন করা হবে। বিষয়টি নিয়ে ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলতে পারেন। তিনি উপজেলা ভিজিডি কমিটির সভাপতি।’
কলাপাড়া ইউএনও আবু হাসনাত মোহম্মদ শহিদুল হক বলেন, ‘ভিজিডি নিয়ে কোনো ধরনের অনিয়মের অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
কাজী সাঈদ/এমএসআর