যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল পাটবাড়ি গ্রামের আসাদুল হকের সঙ্গে ১৭ বছর আগে পুটখালী বালুন্ডা এলাকার হাফিজা খাতুনের বিয়ে হয়। বাবার কোনো জমি না থাকায় শ্বশুরবাড়িতে ঘরজামাই থাকতেন দিনমজুর আসাদুল। তিন সন্তান নিয়ে খুপড়ি ঘরে দুর্বিসহ জীবনযাপন করতেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘর পেয়ে এখন জীবনমানের উন্নতি হয়েছে তাদের। 

উপহারের ঘরে ওঠার এক মাসের মধ্যেই এই দম্পতির ঘর আলো করে জন্ম নেয় একটি ছেলে সন্তান। তারা খুশি হয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ছেলের নাম রেখেছেন শেখ মুজিবুর রহমান। উপজেলার বালুন্ডা আশ্রায়ণ প্রকল্পে জন্ম নেওয়া শিশুটিকে দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন অনেকেই। বর্তমানে শিশুটির বয়স ৫ মাস। 
 
শিশুটির মা হাফিজা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, টানাপোড়েনের সংসারে জায়গা কিনে ঘর করবে এমন সামর্থ্য আমাদের নেই। ছোট্ট খুপড়ি ঘরে আমাদের থাকার খুব কষ্ট হচ্ছিল। তারপর প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষ উপলক্ষে আমাদের যাদের ঘর-জায়গা নাই, তাদের নিজ নামে দুই শতক জমি, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, সুন্দর বারান্দাসহ বসবাসের নিরাপদ সুবিধা দিয়েছে। 

তিনি বলেন, গত ৯ মার্চ বালুন্ডা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো ইউএনও স্যার আমাদের বুঝিয়ে দেন। ওইদিনই গর্ভের সন্তান নিয়ে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে উঠি। ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আমাদের ঘর আলো করে জন্ম নেয় একটি ছেলে সন্তান। নতুন ঘর পাওয়ার কিছু দিনের মধ্যে মেয়ে সন্তানের পর ছেলে সন্তান হওয়ায় খুব খুশি আমরা। ছেলে হওয়ার পরে বালুন্ডা আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাওয়া ১০ পরিবার মিলেই সিদ্ধান্ত নেয়- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে আমাদের আশ্রয় দিয়েছেন। তাই তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ছেলের নাম শেখ মুজিবুর রহমান রাখা হবে। তারপর থেকে সবাই তাকে শেখ মুজিবুর রহমান বলেই ডাকে।

শিশুটির বাবা আসাদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের থাকার তেমন কোনো জায়গা ছিল না। ছোট্ট কুঁড়েঘরে দিনমজুরি করেই দিন এনে দিন পার করতাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষ উপলক্ষে আমাদের নতুন ঘর দিয়েছেন। ঘরের কাগজপত্র পাওয়ার পরে আমার গর্ভবতী স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে এই আশ্রয়ন প্রকল্পে আসি। এখানে এসে আমার স্ত্রী একটি ফুটফুটে শিশুর জন্ম দিয়েছে। আমরা তার নাম রেখেছি শেখ মুজিবুর রহমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের নতুন জীবনের আশা দেখিয়েছেন। এখন আমার জীবনে কিছুটা শান্তি আশা করতে পারি। বর্তমানে স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়েই এই ঘরেই ভালো আছি।  

বালুন্ডা আশ্রয়ণ প্রকল্পে আসাদুল হক ও হাফিজা খাতুন দম্পতির ঘরে জন্ম নেওয়া এই ছেলে সন্তানের নাম রাখা আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রবীণ সদস্য লতিফ মোড়ল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসাদুলের কোনো ঘরবাড়ি ছিল না। প্রধানমন্ত্রী তাকে ঘর দিয়েছে, সে কারণে সে খুব খুশি। এই ঘরে ওঠার মাস খানিকের মধ্যে তার ছেলে সন্তান হয়। সেই ছেলে সন্তানের নাম রাখা হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমান। এই ঘর পাওয়াতে শেখ হাসিনার প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা স্বরূপ শিশুটির নাম শেখ মুজিবুর রহমান রাখা হয়েছে। এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের মানুষের সঙ্গে তারাও খুব ভালো আছে। শিশুটিকে দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছে মানুষ। 
 
যশোরের শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজা বলেন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে উপজেলায় ১২৭টি গৃহহীন পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার পুটখালী বালুন্ডা আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটি পরিবারে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরে ওঠার পরে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তারা বঙ্গবন্ধুর নামে ছেলের নাম রেখেছেন বলে মনে করছি। শিশুটির পরিবারসহ যারা ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা তাদের সবার খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। 

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে তাদের সকলের জন্য গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। তাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সব ধরনের কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া এই আশ্রয়ণ পরিকল্পের সামনে দিয়ে রাস্তাটি সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়া রয়েছে। আশা করি দ্রুতই রাস্তাটি সংস্কার করা হবে।

জাহিদ হাসান/আরএআর