ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক : এক বছরেই ডব্লিউ বিমে মরিচা
জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়কে চার লেনের ডিভাইডারে লাগানো ডব্লিউ বিমে (গার্ড রেল) মরিচা ধরেছে। মাত্র এক বছর আগে ডিভাইডারে ডব্লিউ বিম লাগানো হয়েছে। নিম্নমানের বিম লাগানোয় দুর্ঘটনা ঘটলে তাতে হতাহতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরেজমিনে ঢাকা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়কের গোড়াই থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত অংশে ডিভাইডারে লাগানো ডব্লিউ বিমে মরিচা (জং) ধরতে দেখা গেছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনার ফলে কোথাও কোথাও বিম বেঁকে ও ভেঙে গেছে। তবে বছর না ঘুরতেই ডব্লিউ বিমে মরিচা ধরায় সামান্য দুর্ঘটনায় তা ভেঙে যাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
চার লেন প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়কটি প্রায় পৌনে তিন হাজার কোটি টাকায় চার লেনে উন্নতীকরণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এরপর আরও তিন দফায় সেটি বেড়ে ব্যয় ধরা হয় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। ৭০ কিলোমিটার এই মহাসড়কের টাঙ্গাইলের দরুন থেকে মির্জাপুরের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আখতার এবং মির্জাপুর থেকে গোড়াই-চন্দ্রা পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নের কাজ করছে আব্দুল মোনেম লিমিটেড।
জানা গেছে, জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ক চার লেন উন্নীতকরণ সাসেক-১ প্রকল্পের কাজ ২০১৬ সাল শুরু হয়েছিল। মহাসড়কে এক লেন থেকে দুর্ঘটনা কবলিত যানবাহন যেন অন্য লেনে যেতে না পারে এ জন্য মহাসড়কে ডিভাইডারে লাগানো হয় ডব্লিউ বিম বা গার্ড রেল। আর গার্ড রেলের স্থায়ীত্বকাল ধরা হয় ১৫ বছর। এই সময়ে ডব্লিউ বিমে প্রখর রোদ বা বৃষ্টিতে কোনো মরিচা বা নষ্ট হওয়া কথা নয়। কিন্তু নিম্নমানের রং করা এসব ডব্লিউ বিম লাগানোর এক বছর পরেই দেখা দেয় মরিচা।
বিজ্ঞাপন
এদিকে এসব মরিচা ধরা ডব্লিউ বিমগুলো খুলে সেগুলো নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে রংয়ের প্রলেপ দিয়ে আবার মহাসড়কে লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ফলে কয়েক মাস পরেই বিমগুলো রোদ বা বৃষ্টিতে আবার মরিচা ধরছে।
জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ক চার লেন উন্নীতকরণ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক অমিত কুমার চক্রবর্তী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডব্লিউ বিমের স্থায়ীত্বকাল সাধারণত ১০-১৫ বছর থাকে। এর মধ্যে কোনো ধরনের জং বা মরিচা ধরবে না। তবে এগুলো আনার পর যেখানে রাখা হয়েছিল সেখান থেকেই এমন হয়েছিল। মূলত ওই স্থানে রাখা ঠিক হয়নি। মরিচা ধরা ডব্লিউ বিমগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।
এ ছাড়া এগুলো (মরিচা ধরা ডব্লিউ বিম) বুয়েটে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। মহাসড়কের যেখানে যেখানে ডব্লিউ বিমে মরিচা ধরেছে সেগুলো খুলে জিং রিং কোটিং করতে বলা হয়েছে। তানাহলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে বিম ভেঙে যাবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্স অ্যান্ড ইনস্টিটিউট (এআরআই) এর সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডব্লিউ বিম দীর্ঘ সময় রোদ-বৃষ্টির মধ্যে থাকে। তাই মরিচা ধরার কথা নয়। নিম্নমানের ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করার কারণে বিমে মরিচা ধরেছে।
তিনি আরও বলেন, মহাসড়কের ফোর লেনে পরিবহন খুব দ্রুতগতিতে চলাচল করবে। এতে যদি কোনো পরিবহন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এবং সেই পরিবহন যাতে অন্য লেনে না যায়, এ জন্য মহাসড়কে ডব্লিউ বিম বা গার্ড রেল লাগানো হয়। এটি যদি মরিচা ধরে ভঙ্গুর হয়ে যায় তাহলে দুর্ঘটনা ঘটলে হতাহতের সংখ্যা অনেক বাড়বে।
এসপি