মহিদুলের এক রসগোল্লার দাম ৬০০ টাকা
বাজারে হরেক রকমের মিষ্টি পাওয়া যায়। যার মধ্যে রসে টইটুম্বুর রসগোল্লা অন্যতম। সেই আদিকাল থেকেই রসগোল্লা নিয়ে রচিত হয়েছে গল্প, নাটক ও লোককাহিনী। তবে এই রসগোল্লার গল্পটি একটু ভিন্ন। বাজারে সাধারণত ১০০ থেকে দেড়শ গ্রাম ওজনের রসগোল্লা পাওয়া যায়। মহিদুলের দোকানে তৈরি হয় একটু ব্যতিক্রমী রসগোল্লা। যার প্রতিটির ওজন এক থেকে তিন কেজি পর্যন্ত। স্বাদ ও গন্ধে ভিন্নধর্মী এ রসগোল্লা খেতে ভোজন রসিকরা তার দোকানে ভিড় করেন। তবে যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে সে অনুযায়ী সরবরাহ করতে পারছেন না তিনি। কারণ সাধ থাকলেও সাধ্য নেই তার।
মেহেরপুর সদর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে মহিদুল ইসলাম। ছোটবেলা থেকেই মিষ্টি বিক্রি করেন। তিনি অন্যের কাছ থেকে মিষ্টি পাইকারি কিনে বিক্রি করতেন। এতে লাভ কম হতো। পরে নিজেই শুরু করেন মিষ্টি তৈরির কাজ। ১১ থেকে ১২ বছর মিষ্টি তৈরির কাজ করছেন মহিদুল ইসলাম।
বিজ্ঞাপন
অন্যান্য মিষ্টির তুলনায় রসগোল্লার চাহিদা ও খ্যাতি পাওয়ায় এখন শুধু রসগোল্লাই তৈরি করেন। তার তৈরি রসগোল্লা এলাকায় খ্যাতি লাভ করলে বাড়তে থাকে ব্যবসার পরিধি। জেলা থেকে জেলার বাইরেও বাড়তে থাকে তার মিষ্টির কদর। প্রথমে ছোট আকৃতির মিষ্টি তৈরি করলেও এখন তিনি তৈরি করছেন এক কেজি, দুই কেজি ও তিন কেজি ওজনের রসগোল্লা। প্রতি কেজি রসগোল্লার দাম ২০০ টাকা। দুধের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন আর তেমন লাভ হচ্ছে না। লাভ কম হলেও রসগোল্লার দাম বাড়াননি তিনি।
জেলা ও জেলার বাইরে থেকে প্রতিনিয়ত মহিদুলের দোকানে রসগোল্লা খেতে আসেন ভোজন রসিকরা। রসগোল্লা খেয়ে সুনামও করেন তারা। মহিদুলের রসগোল্লা তৈরিতে সহযোগিতা করেন তার স্ত্রী নারগিছ বেগম। পরিবারের সব কাজ সেরে স্বামীর রসগোল্লা তৈরি ও বিক্রির কাজে সহযোগিতা করেন নারগিছ বেগম।
বিজ্ঞাপন
চুয়াডাঙ্গা থেকে রসগোল্লা খেতে আসা সাগর আহম্মেদ বলেন, আমরা অনেক দিন আগে শুনেছি দুই কেজি ওজনের রসগোল্লার গল্প। এখানে বেশ কয়েকজন বন্ধু মিলে মহিদুলের রসগোল্লা খেতে এসেছি। আমরা খেয়েছি এবং পরিবারের জন্য নিয়ে যাচ্ছি।
আরেক ক্রেতা সৌরভ বলেন, আমার এক বন্ধু এই রসগোল্লা নিয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে খবর পেয়ে আমিও এসেছি। আমি ও আমার বন্ধুরা একটি দুই কেজি ওজনের রসগোল্লা খেয়েছি এবং তিন কেজি ওজনের রসগোল্লা বাসায় নিয়ে যাচ্ছি।
মহিদুলের স্ত্রী নারগিছ বেগম বলেন, আগে আমাদের তৈরি রসগোল্লার ব্যাপক চাহিদা ছিল। আমরা রসগোল্লা সকলকে দিতে পারতাম না। এখন সেই জৌলুস আর নেই। করোনায় লকডাউনের কারণে দোকান খুলতে পারি না। দূর-দূরান্তের ক্রেতারা আসতে না পারায় এখন ব্যবসায় মন্দা ভাব।
রসগোল্লার কারিগর মহিদুল ইসলাম বলেন, সর্বনাশা করোনা আমাদের রসগোল্লার সব রস শুকিয়ে দিয়েছে। লকডাউন শিথিল হয়েছে। আগের মত মানুষ আসতে পারলে আমার রসগোল্লার জৌলুস ফিরে পাব। তবে আর্থিক সংকটের কারণে রসগোল্লা তৈরি করে ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দীন চুন্নু বলেন, আমার ইউনিয়নের মধ্যে শ্যামপুর খুবই পরিচিত গ্রাম। সেখানে মহিদুলের রসগোল্লার দোকান রয়েছে। সে এক থেকে তিন কেজি ওজনের রসগোল্লা তৈরি করে। এলাকায় তার রসগোল্লার অনেক কদর। বিভিন্ন এলাকার মানুষও তার দোকানে রসগোল্লা কিনতে আসে।
তিনি আরও বলেন, ব্যবাসয়ী হিসেবে তাকে যতটুকু সহযোগিতা করা দরকার আমি সে সহযোগিতা করি। মহিদুলের রসগোল্লা আমাদের জেলার ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
আরএআর