নতুন পোশাক পেয়ে খুশি সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা
মানিকগঞ্জে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে নতুন স্কুল ড্রেস বিতরণ করা হচ্ছে
নতুন বছরের শুরুতেই নতুন পোশাক পেয়ে উল্লাসে ভাসছে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেউথা এলাকার বস্তির সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা। বস্তির এ সকল ঝড়ে পড়া শিশুদের শিক্ষাদানে ২০১৭ সালে বেউথা এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় দিশারী স্কুল। সন্তানদের লেখাপড়ার সুযোগ হওয়াতে আনন্দিত অভিভাবকরাও।
সাধারণত বস্তির বাসিন্দারা গরিব, অসহায় এবং স্বল্প আয়ের মানুষ হয়ে থাকে। এ কারণে সন্তানদের লেখাপড়া করানোর মতো তেমন সুযোগ থাকে না। যার ফলে কোমলমতি এ সকল শিশুরা শিক্ষার দিক থেকে ঝড়ে পড়ে। বস্তির এ সকল সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের লেখাপড়া সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে দিশারী স্কুল।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌসের নির্দেশনায় ও আর্থিক সহায়তায় সরকারি জায়গার ওপর ইটের দেয়াল ও এসএস'র দর্শনীয় গেট ঘেরা স্কুলভবন তৈরি হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত কোনো পোশাক ছিল না। জেলা প্রশাসক এসএম ফেরদৌস এবং জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রধান দুর-রে-শাহওয়াজ শিক্ষার্থীদের জন্য পোশাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেই অনুযায়ী জেলা পর্যায়ে সরকারের এই শীর্ষ দুই কর্মকর্তা দোকানে গিয়ে কাপড়ের রং নির্ধারণ ও ক্রয় করেন। পরে শিক্ষার্থীদের মাপ অনুযায়ী পোশাক তৈরি করা হয়।
দিশারী স্কুলের ২য় শ্রেণীর ছাত্রী উর্মিলা বলেন, নতুন স্কুল ড্রেস পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। আমাগো আগে কোনো স্কুল ড্রেস ছিল না। এবার স্কুলে স্যারেরা আমাগো জন্য নতুন স্কুল ড্রেস দিছে।
বিজ্ঞাপন
উর্মিলার বাবা উজ্জ্বল হোসেন বলেন, সংসারের অভাবের কারণে সন্তানদের ঠিকমতো খাওন দিবার পারি না। চায়ের দোকান করে যে টাকা রোজগার হয় তা দিয়ে কোনো মতো পরিবার নিয়ে চলি। মেয়ের স্কুল ড্রেস বানিয়ে দেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই। তয় স্কুলের স্যারেরা আমাগো মতো লোকজনের সন্তানদের লেখাপড়া করার সুযোগ করে দেওয়ায় আমগো অনেক ভালো হইছে। আর স্কুলের নতুন ড্রেস পেয়ে আমার মেয়েসহ আমরাও অনেক খুশি।
রিকশাচালক আলম বলেন, শহরে সারাদিন রিকশা চালিয়ে কোনো দিন আয় হয় তিনশ আবার কোনো দিন সাড়ে তিনশ টাকা। করোনার কারণে আমাগো রিকশার ট্রিপ আগের মতো হয় না। সংসারের খরচ জোগানোই কষ্ট, মেয়ের স্কুলের নতুন ড্রেস বানায়ে দিবো কেমনে? কাইলকা সন্ধ্যায় বাড়িতে গিয়ে শুনলাম স্কুল থেকে সবাইরে নতুন স্কুল ড্রেস দিছে। শুনে মনটা ভরে গেল। স্কুলের স্যাররা সত্যিই অনেক ভালো।
দিশারী স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সুকন্যা বলেন, আমার বাবায় বেউথা এলাকায় একটি মুরগি দোকানে কাজ করে। আমরা খুব গরিব। বাবার আয় দিয়েই আমগো সংসার চলে। আর্থিক দৈন্যতার জন্য বাবা আমাকে নতুন ড্রেস বানায় দিতে পারে নাই। তয় আমাদের স্কুলের স্যাররা কাইলকা আমাগো স্কুলের নতুন ড্রেস দিছে। ড্রেস পাইয়া আমি অনেক খুশি।
বেসরকারি সামাজিক সংগঠন দিশারীর সভাপতি হাসান শিকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বস্তির এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের লেখাপড়ার জন্য দিশারী স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুর দিকে বেউথা এলাকায় খোলা আকাশের নিচে এসব শিশুদের পাঠদান দেয়া হতো। তবে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক স্যারের সহযোগিতায় স্কুলের জন্য একটি ঘর নির্মাণ করে দেন।
তিনি আরও বলেন, ডিসি স্যার ও জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতায় স্কুলের ৫০ জন শিক্ষার্থী পেয়েছে নতুন বছরে নতুন স্কুল ড্রেস। এতে শিক্ষার্থীসহ তাদের অভিভাবকরা অনেক খুশি এবং উপকৃত হয়েছে।
দিশারী সংগঠনের উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস বলেন, বেউথা এলাকার বস্তির শিশুরা সমাজের উচ্চ শ্রেণীর শিশুদের চেয়ে লেখাপড়াসহ সব সুযোগ সুবিধা থেকে বরাবরই বঞ্চিত হয়ে আসছে। এ সকল শিশুদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই দিশারী স্কুলটি করা হয়েছে। সেখানে তারা বেশ ভালো পরিবেশে লেখাপড়া করছে। নতুন বছরে স্কুলের এ সকল অসহায় শিশুরা নতুন স্কুল ড্রেস পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত। তাদের এই আনন্দ আর হাসিখুশি মুখ দেখে আমার মনটা ভরে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সমাজের বিত্তশালীরা সামাজে ঝড়ে পরা এ সকল শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে এগিয়ে এলে এ সকল শিশু সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে উঠবে।
মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস ঢাকা পোস্টকে বলেন, দিশারী স্কুলের মাধ্যমে বেউথা এলাকার বস্তির শিশুরা লেখাপড়া করার সুযোগ পেয়েছে। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় দিশারী স্কুলের একটি ভবন ও সীমানা প্রাচীর তৈরি করে দেয়া হয়েছে। দিশারী স্কুলের শিক্ষার্থীরা নতুন বছরে নতুন স্কুল ড্রেস পেয়ে খুব খুশি।
উল্লেখ্য, বুধবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে বেউথা এলাকায় দিশারী স্কুলের প্রাঙ্গণে স্কুলের তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ৫০ জন শিক্ষার্থীর হাতে নতুন ড্রেস তুলে দেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দুর-রে-শাহওয়াজ।
এসপি