খুলনায় প্রথম পর্যায়ে ৯৭ হাজার সম্মুখসারির জনগোষ্ঠীর শরীরে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে টিকা প্রয়োগ করা হবে। টিকা ব্যবহারের জন্য নভেম্বর মাসে চাহিদার সংখ্যা উল্লেখ করে পত্র পাঠানো হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। সে অনুযায়ী খুলনা মহানগর ও জেলার ৯টি উপজেলার করোনা মোকাবিলায় সম্মুখসারির জনগোষ্ঠীর নামের তালিকা তৈরি করতে ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

প্রথম পর্যায়ের টিকা প্রদান শেষ হলে ধাপে ধাপে সবাইকে করোনা প্রতিষেধক এই টিকা দেওয়া হবে বলে জানান সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত কোভিড-১৯-এর যে দুটি ডোজ টিকা সরকার কিনতে যাচ্ছে, তা মানুষকে বিনামূল্যে দেওয়া হবে। তবে কারা আগে পাবে, তা ঠিক করেছে স্বাস্থ্য সংস্থা। এই টিকা দুই থেকে আট ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষণযোগ্য, যা বাংলাদেশে বিদ্যমান। প্রথম ডোজ নেওয়ার ২৮ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ করা হবে।

প্রাথমিক অবস্থায় যাদের টিকা দেওয়া হবে, তাদের নামের তালিকা প্রস্তুত করতে শনিবার (১৬ জানুয়ারি) থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র, নাম ও ঠিকানা সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এদিকে নগরের টিকাকরণ কর্মসূচির কার্যক্রম পরিচালনা করবে খুলনা সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ।

খুলনা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় প্রাথমিকভাবে ৯৭ হাজার ২৩০ সংখ্যক করোনা মোকাবিলা সম্মুখসারির কর্মীর শরীরে টিকা দেওয়ার জন্য প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে। এর জন্য তালিকা প্রণয়ন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদা পাঠায় সিভিল সার্জনের দপ্তর।

এ বিষয়ে খুলনা সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে এই টিকা আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আসার সঙ্গে সঙ্গে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ে দ্রুত টিকা প্রদান করা হবে। টিকাকরণ কর্মসূচি সঠিকভাবে প্রয়োগের জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে।

সিভিল সার্জন বলেন, চাহিদা অনুযায়ী যেসব ব্যক্তি টিকা পাবেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যে তাদের নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করে গ্রহীতার নামের তালিকা প্রস্তুত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হবে। এর জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে।

যারা পাচ্ছেন করোনা প্রতিষেধক টিকা
টিকার পর্যায়ভিত্তিক প্রাপ্যতা বিবেচনা করে প্রাথমিকভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠী, তথা কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী, সম্মুখসারির কর্মী, রোগ প্রতিরোধক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী, বয়োজ্যেষ্ঠ জনগোষ্ঠী, দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী, শিক্ষাকর্মী এবং গণপরিবহনকর্মীরা টিকাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। টিকাদান কার্যক্রম শুরুর আগে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর তালিকা প্রণয়ন ও টিকা প্রদানে নগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মনিটরিং কমিটি গঠন করেছে খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগ।

চাহিদা অনুসারে প্রথম পর্যায়ে খুলনা সিটি করপোরেশন ও দুটি পৌরসভার ১ হাজার ৬৯০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাচ্ছেন এই টিকা। এ ছাড়া তালিকায় খুলনায় কর্মরত সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা ৩০ হাজার ৬০৬, সরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৪ হাজার ১৩০, বেসরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৮ হাজার ১০১, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর সংখ্যা ৫৪৮, বিজিবি সদস্য সংখ্যা ৪১৩, পুলিশ সদস্য সংখ্যা ১ হাজার ৮৫৯, আনসার ও ভিডিপির সদস্য সংখ্যা ৮ হাজার ৯৯৩, স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মচারীর সংখ্যার মধ্যে জেলা পরিষদের সংখ্যা ২৯৫, উপজেলা পরিষদের সংখ্যা ১ হাজার ৯১, ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা ১ হাজার ২৭৩, শিক্ষাকর্মীর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীর সংখ্যা ১৬ হাজার ৭৮৪ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীর সংখ্যা ২০ হাজার ৯০০ জন এই টিকা পাবেন। তালিকায় প্রথম পর্যায়ে খুলনায় কর্মরত ৫৪৭ গণমাধ্যমকর্মীও এই টিকা পাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত কোভিড-১৯-এর যে দুটি ডোজ টিকা সরকার কিনতে যাচ্ছে, তা মানুষকে বিনামূল্যে দেওয়া হবে। তবে কারা আগে পাবে, তা ঠিক করেছে স্বাস্থ্য সংস্থা। এই টিকা দুই থেকে আট ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষণযোগ্য, যা বাংলাদেশে বিদ্যমান। প্রথম ডোজ নেওয়ার ২৮ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ করা হবে।

এনএ