মেয়র, কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে বরগুনায় সদর থানায় আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা

পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে মেয়র, কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে বরগুনায় সদর থানায় আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় এক প্রার্থী অপর প্রার্থীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন।

মেয়র থেকে শুরু করে কাউন্সিলর প্রার্থীরা একে-অপরের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তুলেছেন। বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে বরগুনা সদর থানা প্রাঙ্গণে এ সভার আয়োজন করে পুলিশ।

সভায় পুলিশ সুপারসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাও। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে সভায় পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরা উপস্থিত হন।

প্রথমে পুলিশের পক্ষ থেকে আমন্ত্রিত প্রার্থীদের বক্তব্য শোনা হয়। শুরুতে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর রইসুল আলম রিপন বক্তব্য রাখেন। তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোশাররফ হোসেন খানের বিরুদ্ধে বলেন আমার কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হয়। বিশেষ করে মোশাররফ হোসেন খানের ছেলে মুরাদ খান; যিনি পুলিশে চাকরি করতেন, মাদকসহ ধরা পড়ে বরখাস্ত হন। মুরাদ খানের নাকি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ক্লাসমেট, তার ক্ষমতা দেখিয়ে ভোটারদের বিভ্রান্তের পাশাপাশি ভয় দেখান। তার কাছে অবৈধ অস্ত্র আছে। আমরা তার ভয়ে আতঙ্কে রয়েছি।

রইসুল আলম রিপনের বক্তব্যের জবাবে মোশাররফ খান পাল্টা অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, রিপন আমাকে উদ্দেশ্য করে অশ্রাব্য গালিগালাজ করেছে। রিপনের ছেলে আমাকে ধাওয়া করেছে। আমি বাসায় ঢুকেছি ভয়ে, আমি এর প্রতিকার চাই।

চার নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী শহিদুল ইসলাম নান্না তার বক্তব্যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আকতারুজ্জামান লিমনের বিরুদ্ধে ভোটারদের টাকা দেওয়ার অভিযোগ আনেন। 

সেখানে উপস্থিত একই ওয়ার্ডের অপর কাউন্সিলর প্রার্থী গৌরাঙ্গ সিকদার শিবু নান্নার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ এনে বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে ভোট কেনার প্রচলন নান্নাই শুরু করেছিলেন, তিনি এলাকায় মাদক ও সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটিয়েছেন। টাকার বিনিময়ে প্রভাব খাটিয়ে ভোট কিনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী কবিরুরু রহমান বলেন, বুধবার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আমার কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে কুপিয়ে একজনকে জখম ও দুজনকে আহত করেছেন। আমি এর প্রতিকার চেয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছি।

৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারুক হোসেন সিকদার ও একই ওয়ার্ডের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাসুদ একে-অপরের উদ্দেশ্যে অভিযোগ আনেন। মাসুদকে গাঁজাখোর উল্লেখ করলে ফারুককে ধর্ষক আখ্যা দেন মাসুদ। পরে সেখানে উপস্থিত পুলিশের মধ্যস্থতায় বিষয়টির সমাধান হয়।

পরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী আবদুল হালিম ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা জালাল উদ্দীন বক্তব্য রাখেন। তারা উভয়ে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ না আনলেও আইনশৃঙ্খলা অবনতির শঙ্কার কথা উল্লেখ করেছেন।

এরপর স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. শাহাদাত হোসেন বক্তব্য রাখেন। তিনি নৌকার মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান মহারাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলেন, ‘আমি নির্বাচনে আতঙ্কে আছি। আমার প্রচার মাইকের ব্যাটারি ফেলে দিয়েছেন নৌকার কর্মীরা। নির্বাচনে আমার জীবন হুমকির মুখে। আমি যেকোনো মুহূর্তে হামলার শিকার হতে পারি। আমার নিরাপত্তা নেই। আমার প্রচারণায় প্রতিনিয়ত বাঁধা সৃষ্টি করছেন নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা। 

প্রার্থীদের মধ্যে সবশেষ বক্তব্যে আওয়ামী লীগ মনোনীন নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, কালো টাকা ব্যবহার করে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন ভোট কেনার পাঁয়তারা করে আসছেন। গতকাল ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মারামারি হয়েছে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে। সেখানে পৌর মেয়র শাহাদাত হামলাকারী প্রার্থীর পক্ষে থানায় এসেছেন। 

গতকাল রাত ১টার দিতে আশ্রয়ণ থেকে একের পর এক আমার কাছে ফোন এসেছে। নৌকা সমর্থন করার কারণে আমার লোকজনকে মারধর করে ঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে আশ্রয়ণে গিয়ে আমার লোকজনের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করেছে। 

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিএনপি, জাতীয় পার্টি বা ইসলামী শাসনতন্ত্রের কোনো অভিযোগ নেই।  বরং অভিযোগ তার, যে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে। আমি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অঙ্গিকারবদ্ধ। আমার ছাত্রলীগের ছেলেদের বাসায় গিয়ে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে হুমকি দিয়ে আসছে। এরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। পুলিশকে অনুরোধ করছি, এদের বিরুদ্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নিন।

বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) শহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় মতবিনিময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরগুনা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার হাওলাদার, বরগুনা সদর সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মেহেদী ও বরগুনা সদর থানার ওসি কে.এম তারিকুল ইসলাম প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর  মল্লিক বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা বদ্ধ পরিকর। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব, আপনারা আমাদের সহযোগিতা করুন। আপনাদের সহযোগিতা আমাদের সবার জন্য কল্যাণকর। সবাই মিলে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে সুষ্ঠু নির্বাচনের উদহরণ সৃষ্টি করতে চাই। 

প্রার্থীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, আপানাদের সবার বক্তব্য আমরা নোট নিয়েছি। প্রতিটি বিষয়ে পুলিশ খোঁজ নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেবে।

এএম