বাগেরহাটের মোল্লাহাট ও গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়াকে বিভক্ত করেছে মধুমতি নদী। মধুমতি নদীর ক্রমাগত ভাঙনের ফলে কয়েক বছরে মোল্লাহাটের সোনাপুর ও চরবাসুরিয়া গ্রামের শতাধিক বসতভিটা, বাড়িঘর, রাস্তা, গাছ-পালা, বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হয়েছে। ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেক মানুষ।

অব্যাহত ভাঙনে ফলে নদীর সোনাপুর- চরবাসুড়িয়া তীরের অন্তত ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার তীর প্রবল ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সেচ ভবন, সোনাপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, পাকা সড়ক, ফসলি জমি ও বসতভিটা।

মধুমতির ভাঙন রোধ করতে অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা। তবে ভাঙনরোধে বাঁধ নির্মাণের ডিজাইন শেষে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) তৈরির কাজ চলছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

স্থানীয়রা জানায়, মধুমতি নদী ভাঙতে ভাঙতে দুই গ্রামের অনেক বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। এখন আর সরে যাওয়ার জায়গা নেই। বৃষ্টির মৌসুম আসলেই গরু-বাছুর, গাছপালাসহ মূল্যবান সম্পদ নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। এই দুই গ্রামের মানুষ ও তাদের জানমাল রক্ষার জন্য স্থায়ী বাঁধ দেওয়া প্রয়োজন।

মধুমতির ভাঙনে প্রায় সাত বিঘা জমি হারিয়েছেন সোনাপুর গ্রামের নজরুল মোল্লা বলেন। তিনি বলেন, কয়েক বছরে তিনবার ঘর সরানো লেগেছে। এরপরে আর ভাঙলে পরিবার নিয়ে ভাসা ছাড়া আমার কোনো উপায় থাকবে না।

বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসমত শেখ বলেন, চোখের সামনেই অনেকের বাড়ি ঘর নদীগর্ভে বিলীন হতে দেখেছি। ফসলি জমি বাড়ি ঘর হারিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছেন অনেকে। এখন যারা এই এলাকায় বসবাস করছেন তাদের অনেকেই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নদীর চরের মাটি ইটভাটায় ব্যবহার করে। ফলে মধুমতির ভাঙন আরও প্রবল হচ্ছে। ইট ভাটা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।

মোল্লাহাট উপজেলার আটজুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য লিটন মোল্লা বলেন, চরবাসুরিয়া ও সোনাপুর দুই গ্রামের মানুষ ভাঙনের প্রবল ঝুঁকিতে রয়েছে। ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে নিঃস্ব হয়ে যাবে অনেক পরিবার।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৈদ্য বলেন, মধুমতি নদীর ৩ হাজার ৪০০ মিটার এলাকা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের খুলনা বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীসহ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেছি। এখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ডিপিপি প্রস্তুতের কাজ শুরু করেছি।

তানজীম আহমেদ/এমএসআর