মাগুরার শ্রীপুরে এবার পেঁপের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে দাম কম হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। ফলন ভালো হলেও এবার তাদের লোকসানের কবলে পড়তে হবে বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্রীপুর থেকে প্রতিনিয়ত পেঁপে যাচ্ছে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হেমায়েতপুর, নবীনগর, গাবতলী, স্লুইসগেট এবং বরিশালের বিভিন্ন কাঁচা বাজারসহ দেশের বিভিন্ন হাট বাজারে। স্থানীয় বাজারগুলোতে পেঁপের দাম একটু বেশি হলেও রাজধানী ও বরিশালের বাজারগুলোতে দাম কম হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।

সরেজমিনে শ্রীপুর উপজেলার বারইপাড়া, বরিশাট, খামারপাড়া, হাটশ্রীকোল, সব্দালপুর, রাধানগর, দারিয়াপুর গ্রামে দেখা যায়, মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে থোকা থোকা পেঁপে। ফলন ভালো হওয়ায় বেশির ভাগ জমিতে এবার শাহী জাতের পেঁপে রোপণ করা হয়েছে। শাহী জাতের একটি পরিপক্ক পেঁপের ওজন ৫-৭ কেজি। এবার তিন শতাধিক কৃষক পেঁপে চাষ করছেন। বাগান থেকে তুলে তা ট্রাকে করে রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচা বাজারে নিয়ে যেতে এখন ব্যস্ত সময় পার পারছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। 

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, শ্রীপুরে এবার পেঁপের বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলায় এ বছর ১৮৫ হেক্টর জমিতে পেঁপে চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় এ বছর ২০ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ হয়েছে। এবার হেক্টর প্রতি ফলন হয়েছে ৪৮ থেকে ৫০ মেট্রিক টন। দ্রুত ফল আসায় এবং ফলন ভালো হওয়ায় শাহী পেঁপে চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। শাহী জাতের পেঁপে গাছগুলো তিন বছর ধরে ফল দেয় বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ ।

উপজেলার বারইপাড়া গ্রামের পেঁপে চাষি অলোক বসু জানান, এক একর জমিতে পেঁপে চাষ করতে প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়। এখন মণ প্রতি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে। ফলন ভালো হলেও এখন লোকসান গুনতে হচ্ছে। এবারই প্রথম পেঁপের দাম এত কম। তবে পেঁপে দীর্ঘমেয়াদী ফল হওয়ায় দ্বিতীয় বছর গিয়ে আর ক্ষতি হবে না।

শ্রীকোল গ্রামের পেঁপে ব্যবসায়ী রুবেল মোল্যা বলেন, স্থানীয় বাজারে পেঁপের দাম প্রতি কেজি ১০-১৫ টাকা। কিন্তু রাজধানীর বাজারগুলোতে আমাদের প্রতি কেজি ৭-৯ টাকায় বিক্রি করতে হয়। মাঠ থেকে ১৫০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা মণ পেঁপে কিনলেও সব খরচ বাদ দিয়ে আমাদের লাভ হচ্ছে না।

খামারপাড়া গ্রামের ইদ্রিস মোল্ল্যা বলেন, কীটনাশক, সার এবং কাজের লোকের মজুরি বেশি হওয়ায় পেঁপে চাষে খরচ অনেক বেশি পড়ছে। তবে মাঠের জমি থেকে ব্যবসায়ীরা পেঁপে সংগ্রহ করায় চাষিদের অনেকটা ঝামেলা কমেছে। পেঁপের ফলন ভালো হয়েছে কিন্তু দাম কম হওয়ার আমাদের অনেক টাকা লোকসান হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে দাম বেশি হলেও চাহিদা অনেক কম থাকায় বাধ্য হয়েই পেঁপে বাইরের বাজারগুলোতে পাঠাতে হচ্ছে। প্রতি বছর তো আর লাভের আশা করা যায় না। এ বছর পেঁপেতে আমাদের লাভ হবে না বরং লোকসানই হচ্ছে বলে তিনি আক্ষেপ করেন। 

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সালমা জাহান নিপা বলেন, করোনার মধ্যেও মাঠ পর্যায়ে পেঁপে চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী অব্যাহত রেখেছি। উপজেলায় এ বছর পেঁপের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসলের মৌসুমে দাম স্বাভাবিকভাবেই কম হয়। এখন পেঁপের মৌসুম। তাই স্বাভাবিকভাবেই দাম কম।

তিনি আরও বলেন, এ বছর শ্রীপুর উপজেলার পেঁপে যাচ্ছে ঢাকা এবং বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ হাট-বাজারে। শিগগির কৃষকেরা লোকসান পুষিয়ে উঠবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। 

এসপি