হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফেরাল দশমৌজা
কাবাড়ি খেলা দেখতে হাজারো মানুষের ঢল
একটা সময় গ্রামে গ্রামে আয়োজন করা হতো কাবাডি খেলার। সেই খেলা দেখতে ভিড় জমাতেন হাজার হাজার দর্শক। এখন আর তেমন দেখা যায় না বাংলাদেশের জাতীয় এ খেলা। আধুনিক খেলার এই জগতে অনেকটা হারিয়ে যেতে বসেছে কাবাডি বা হাডুডু।
দীর্ঘ কয়েক যুগ পর সেই হারিয়ে যাওয়া ঐহিত্য ফেরালো মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ভাদগাঁও দশ মৌজার যুবকরা। শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) রাতে অনুষ্ঠিত হয় ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে কাবাডি প্রতিযোগিতা।
বিজ্ঞাপন
খেলার আয়োজক রাজন আহমদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্রামবাংলার প্রাচীনতম হাডুডু খেলা আমাদের দেশের জাতীয় খেলা হলেও এখন তা হারিয়ে যেতে বসেছে। জাতীয় এই খেলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে আমরা এ বছর কাবাডি খেলার আয়োজন করি। খেলায় সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন আমেরিকা প্রবাসী রোকন আহমদ।
কাবাডি প্রতিযোগিতায় উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হয় সদর উপজেলার বালিগান্দি গ্রামর টিম ‘হঠাৎ আক্রমণ’ ও জাকান্দি গ্রামের ‘বন্দর বাড়ি টিম’। টানটান উত্তেজনাপূর্ণ খেলায় হঠাৎ আক্রমণকে হারিয়ে জিতে যায় জাকান্দি গ্রাম।
বিজ্ঞাপন
খেলা দেখতে আসা মিজানুর রহমান শামীম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশের ক্রিয়া জগতে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ক্রিকেট এবং ফুটবল। ফুটবলে জাতীয়ভাবে আমাদের তেমন সাফল্য না থাকলেও ক্রিকেটে সাফল্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশকে বিশ্বের অনেক দেশের মানুষ এখন চেনেন সাকিব-তামিমের মতো খেলোয়াড়দের পরিচয়ে। তবে এতো প্রাপ্তির মধ্যে কোথায় যেন একটা আত্মতৃপ্তির স্বাদ নেই বলে মনে হয়। এতো জনপ্রিয়তার মধ্যে হারিয়ে গেছে আমাদের গ্রামবাংলার এক সময়কার সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা কাবাডি বা হাডুডু।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, কাবাডি আমদের জাতীয় খেলা। এই খেলা এখন আর দেখা যায় না। আজকে যে বড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে সেটা যদি প্রতিবছর অব্যাহত রাখা হয় তাহলে আমরা আমদের ঐতিহ্যকে লালন করতে পারব।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে প্রথম কাবাডি খেলা শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি কাবাডির উন্নয়নের জন্য কাবাডি ফেডারেশন গঠন করেছিলেন। এটা আমাদের জাতীয় খেলা। এই খেলাটি যাতে হারিয়ে না যায় সেজন্য আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও উদ্যোগ নিবো।
শিক্ষক আব্দুল কাইয়ুম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা কখনো কাবাডি খেলা দেখেনি। অনেকে আবার এর নিয়ম সম্পর্কেই জানে না। পাঠ্যপুস্তকের শারীরিক শিক্ষা বইতে অনেকে প্রথমবারের মতো কাবাডি খেলার সঙ্গে পরিচিত হয়। কিন্তু আসলে কি এটি হওয়া উচিৎ? যেহেতু হাডুডু আমাদের জাতীয় খেলা তাই ছোটবেলা থেকেই এই খেলার সঙ্গে আমাদের পরিচিত হওয়া উচিৎ।
প্রতিযোগিতায় ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হওয়া খেলোয়াড় শাওন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফুটবল ক্রিকেটে যতটা সহজে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব, কাবাডি খেলায় ক্যারিয়ার গড়া তেমনি কষ্টকর। এজন্য তরুণ প্রজন্ম আগ্রহী হচ্ছে না কাবাডি খেলার প্রতি। সরকারের উচিৎ এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা ও উদ্যোগ গ্রহণ করা। তাহলে একদিকে খেলোয়াড়রা যেমন উৎসাহিত হবে, তেমনি খেলার জনপ্রিয়তা বাড়বে।
উল্লেখ্য, এশিয়া মহাদেশে কাবাডি খেলার উৎপত্তি । স্বাধীনতার পর জাতীয় খেলা হিসেবে বাংলাদেশে স্বীকৃতি পায় কাবাডি। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়। ১৯৭৮ সালে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলংকা ও মায়ানমারের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়।
এসপি