দৃষ্টি প্রতিবন্ধী তিন সন্তানকে নিয়ে বিপাকে অসহায় মা
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সুরাইয়ার পরিবারকে ইন্সপিরেশন ওয়েলফেয়ার সোসাইটির পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বাখরনগর ইউনিয়নের জংঙ্গিশিবপুর গ্রামের স্বামীহারা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সুরাইয়া খাতুন (৬৪)। পাঁচ সন্তানের মধ্যে এক ছেলে ও দুই মেয়েও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী সন্তানদের জন্য সরকার থেকে যে ভাতা মিলছে তাতে চলছে না সুরাইয়ার সংসার। বাধ্য হয়ে তাকে করতে হচ্ছে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ।
জানা গেছে, সুরাইয়া খাতুন পাচ্ছেন না কোনো বয়স্ক ভাতা। সঙ্গে মিলছে না প্রতিবন্ধীর সনদ। ছেলে ওমর ফারুক ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয় থেকে বেল পদ্ধতিতে পড়াশোনা শেষ করে বেকার হয়ে আছেন।
বিজ্ঞাপন
এদিকে, সুরাইয়া খাতুন ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সন্তাদের নিয়ে গেল বছরে স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে বুধবার (১৩ জানুয়ারি) প্রতিবন্ধী সুরাইয়া খাতুনের পরিবারের খোঁজ নিতে ছুটে যান আরটিভি ও লাবিব গ্রুপের সহযোগিতায় গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠান ইন্সপিরেশন ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সদস্যরা। এ সময় পরিবারটিকে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য দুইটি ছাগল, পাঁচটি হাঁস ও শীতবস্ত্র তুলে দেন তারা।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সুরাইয়া খাতুন বলেন, স্বামীহারা এই সংসার নিয়ে অনেক দিন ধরে কষ্ট করে আসছি। স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যানরা বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করে দিবো দিবো বলে তাও হচ্ছেনা। অনেক দিন হলো আবেদন করেছি, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। আজ আমাদের দুইটি ছাগল ও পাঁচটি হাঁস দেওয়া হইছে। এতে আমরা অনেক খুশি।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করা সুরাইয়া খাতুনের ছেলে ওমর ফারুক বলেন, আমি প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছি। আমার দুই বোনও পাচ্ছে। সমস্যাটা আমাদের সবার। তাই পড়াশোনা শেষ করেও কাজ পাচ্ছি না। এর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করা হয়েছে। তবে সেখানে উপজাতি ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ বিবেচনা করার কথা থাকলেও তা গেজেট আকারে প্রকাশ পায়নি। আজকে ওয়েলফেয়ার সোসাইটি থেকে আমাদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য যা যা করেছে তাতে আমি অনেক খুশি।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সুরাইয়া খাতুনের মেয়ে অজুফা বলেন, আমি দিনের বেলায় অল্প দেখতে পাই। রাতে একেবারেই সমস্যা হয়। এই অবস্থায় চাইলেও সকল ধরনের কাজ করা সম্ভব না। সরকার যদি আমাদের কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন এবং ভাইকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন তাহলে আমাদের আর কষ্ট থাকবে না।
ইন্সপিরেশন ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা মুনিরা ইসলাম বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরে আমি এই পরিবারের খোঁজ পাই। আজকে আমরা তাদের প্রতি সাহায্যেও হাত বাড়িয়ে দিতে পেরে গর্বিত। এখানে শুধু বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এগিয়ে আসলে হবে না। এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা সমাজসেবা অফিস ও স্থানীয় প্রশাসনকেও এগিয়ে আসতে হবে।
রায়পুরা পৌরসভায় বেসরকারিভাবে গঠিত সুইট বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন বলেন, এই পরিবারের পাশে সকলকে এগিয়ে আসা উচিত। দল মত সব কিছুর উর্ধ্বে গিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ালে তারাও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারবে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি। স্থানীয় সমাজসেবা অফিসও এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন বা আলোচনা করতে আগ্রহী নয়। রায়পুরা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা খলিলুর রহমানের সঙ্গে এ বিষয়ে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সুরাইয়া খাতুনের বয়স্ক ভাতার ব্যাপারে রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, সুরাইয়া খাতুনের দুই মেয়ে ও এক ছেলে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। সুরাইয়ার আবেদন করা আছে। বরাদ্ধ আসলে তারও বয়স্ক ভাতা দেওয়া হবে। তাছাড়া শুধু সরকার নয়, এ সকল পরিবারের পাশে সকলের এগিয়ে আসতে হবে।
এসপি