ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা
ভোটগ্রহণ শেষে চলছে গণনা
বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনায় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া, অভিযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ ও ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে চলছে গণনা। দেশের ৬০ পৌরসভায় শনিবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় এ ভোটগ্রহণ শুরু হয়। শেষ হয় বিকেল ৪টায়।
ভোটগ্রহণ শুরুর প্রথম দিকে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভোটার। শীত উপেক্ষা করে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাধিকার প্রদান করেন ভোটাররা।
বিজ্ঞাপন
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, এই ৬০ পৌরসভার মধ্যে ২৮টি পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এবং বাকিগুলোতে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। একজন মেয়র প্রার্থীর মৃত্যুতে নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার ভোট স্থগিত করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম-সচিব ও পরিচালক (জনসংযোগ) এসএম আসাদুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
সংঘর্ষ, ভোট বর্জন ও কেন্দ্র দখল
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নুরুল মিল্লাত ভোট বর্জন করেছেন। শনিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে পৌরসভার মেতিনীকান্দা এলাকার নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
নুরুল মিল্লাত অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের সমর্থকরা বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বিএনপির প্রার্থীর এজেন্টদেরকে মারধর করে বের করে দিয়েছেন। নৌকায় ভোট দিতে ভোটারদেরকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। তাই এ নির্বাচন থাকার কোনো প্রয়োজন নেই।
এর আগে ভোট কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে বাগেরহাটের মোংলা পোর্ট পৌরসভা নির্বাচনে ভোট বর্জন করেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জুলফিকার আলী । শনিবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের মাদরাসা রোডের নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে জুলফিকার আলী অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের চাপে সাধারণ ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারছেন না। বাধা পেরিয়ে কেউ কেউ কেন্দ্রে যেতে পারলেও সরকারি দলের নিয়োগ করা ক্যাডারদের সামনে তাদের পছন্দের প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এভাবে কোনো সভ্য দেশে নির্বাচন হতে পারে না। আমি নিজে কয়েকটি কেন্দ্রে এমন লজ্জাকর ভোট ডাকাতির চিত্র দেখেছি।
এছাড়াও রাজশাহীর ভবানীগঞ্জ পৌরসভায় ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক প্রামাণিক। ভোটকেন্দ্রে ভোটদানে বাধা এবং কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
নাটোরের নলডাঙ্গায় বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী আব্বাস আলী নান্নুর এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার সকালে (১৬ জানুয়ারি) পৌর এলাকার বুড়িরভাগ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে বিএনপির প্রার্থীর দুই এজেন্টকে বের করে দেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী আব্বাস আলী নান্নু অভিযোগ করে বলেন, সকালে আমার এজেন্ট সাজুসহ দুই এজেন্টকে বুড়িরভাগ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হয়। এতে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভা নির্বাচনে উপজেলা ছাত্রলীগ নেতাদের নেতৃত্বে ভোট কেন্দ্র দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে লস্করপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (চানপুর, জগন্নাথপুর, মমরেজপুর ও লস্করপুর আংশিক) কেন্দ্রে ঘটনাটি ঘটে।
রাজনৈতিক নেতা পরিচয়ধারী কয়েকজন কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
ফেনীর দাগনভূঞা পৌর নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে দুইটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আনসার সদস্যসহ আহত হয়েছেন তিনজন। শনিবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গনিপুর আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। আহত আনসার সদস্যের নাম আরিফুল। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রের অদূরে তারেক হোসেন ও সুজন নামে আরও দুজন আহত হয়েছেন।
ইসির তথ্যমতে, ৬০টি পৌরসভায় তিন পদে ৩ হাজার ২৮৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এরমধ্যে মেয়র পদে ২২১, সংরক্ষিত নারী কমিশনার পদে ৭৪৫ জন এবং সাধারণ কমিশনার পদে ২ হাজার ৩২০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই ধাপে ১ হাজার ৮০টি ভোটকেন্দ্রের ৬ হাজার ৫০৮ ভোটকেন্দ্রে ২২ লাখ ৪০ হাজার ২২৬ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পান। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১১ লাখ ৮ হাজার ৪৩১ জন এবং মহিলা ভোটার ১১ লাখ ৩১ হাজার ৮৩১ জন।
যে ৬০ পৌরসভায় ভোট হয়
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ (ব্যালট), সিরাজগঞ্জের কাজীপুর (ইভিএম), বেলকুচি (ব্যালট), উল্লাপাড়া (ব্যালট), সদর (ব্যালট) ও রায়গঞ্জ (ব্যালট), নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ (ব্যালট), কুষ্টিয়া সদর (ব্যালট), কুমারখালী (ইভিএম), ভেড়ামারা (ব্যালট) ও মিরপুর (ব্যালট), মৌলভীবাজারের কুলাউড়া (ব্যালট) ও কমলগঞ্জ (ব্যালট), নারায়ণগঞ্জের তারাব (ইভিএম), শরীয়তপুর সদর (ইভিএম), কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী (ব্যালট), গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ (ব্যালট) ও সদর (ব্যালট), দিনাজপুর সদর (ব্যালট), বিরামপুর (ব্যালট) ও বীরগঞ্জ (ইভিএম), নওগাঁর নজিপুর (ইভিএম), পাবনার ভাঙ্গুড়া (ব্যালট), ফরিদপুর (ইভিএম), সাঁথিয়া (ব্যালট), ঈশ্বরদী (ব্যালট) ও সুজানগর (ব্যালট), রাজশাহীর আড়ানী (ইভিএম), ভবানীগঞ্জ (ব্যালট) ও কাকনহাট (ইভিএম), সুনামগঞ্জ সদর (ব্যালট), ছাতক (ব্যালট) ও জগন্নাথপুর (ইভিএম), হবিগঞ্জের মাধবপুর (ব্যালট) ও নবীগঞ্জ (ব্যালট), ফরিদপুরের বোয়ালমারী (ব্যালট), ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া (ইভিএম) ও মুক্তাগাছা (ব্যালট), মাগুরা সদর (ইভিএম), ঢাকার সাভার (ইভিএম), নাটোরের নলডাঙ্গা (ইভিএম), গুরুদাসপুর (ব্যালট) ও গোপালপুর (ব্যালট), বগুড়ার শেরপুর (ব্যালট), সারিয়াকান্দি (ইভিএম) ও সান্তাহার (ইভিএম), পিরোজপুর সদর (ইভিএম), নেত্রকোণার কেন্দুয়া (ইভিএম), মেহেরপুরের গাংনী (ইভিএম), ঝিনাইদহের শৈলকুপা (ইভিএম), পার্বত্য খাগড়াছড়ি সদর (ইভিএম), বান্দরবান জেলার লামা (ব্যালট), টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী (ইভিএম), কুমিল্লার চান্দিনা (ইভিএম), ফেনীর দাগনভূঞা (ইভিএম), কিশোরগঞ্জ সদর (ব্যালট) ও কুলিয়ারচর (ইভিএম), নরসিংদীর মনোহরদী (ইভিএম), নোয়াখালীর বসুরহাট (ইভিএম) এবং বাগেরহাটের মোংলা (ইভিএম) পৌরসভা।
সারদেশে মোট পৌরসভা রয়েছে ৩২৯টি। প্রথম ধাপের তফসিলের ২৪টি পৌরসভায় ইভিএমে ভোট হয় ২৮ ডিসেম্বর। তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভায় ৩০ জানুয়ারি এবং চতুর্থ ধাপে ৫৬টি পৌরসভায় ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এমএসআর