রহিদুল ইসলাম রনি। এলাকার মানুষের কাছে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে পরিচিত। ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন, বেকারদের কর্মে উদ্বুদ্ধকরণ, তরুণদের খেলাধুলায় মনোযোগী করতে বেশ কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া রনি অন্যের কাছে ভিক্ষা না চাইতে পরামর্শ দিতেন। কিছু ভিক্ষুককে কাজ ও অল্প পুঁজিতে ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। আজ সেই রনি নিজেই অন্যের কাছে হাত বাড়িয়েছেন। জীবন বাঁচাতে চাইছেন ভিক্ষা। কারণ ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করতে তার জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। এ জন্য দরকার ৩০-৩৫ লাখ টাকা।

দুরারোগ্য ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত রহিদুল ইসলাম রনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সাইন্সেস অনুষদের শিক্ষার্থী। বাড়ি রংপুর সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ময়নাকুটি পরশুরাম এলাকার চিলারঝাড় গ্রামে। আবদুর রহমান ও রওশন আরা দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে রনি সবার বড়। তার ছোট ভাই রওশন হাবিব এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। আর একমাত্র বোন রুশতা পড়ছে দ্বিতীয় শ্রেণিতে।

রনির বাবা কৃষি কাজের পাশাপাশি স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করতেন। কিন্তু লোকসানের ধাক্কা সামাল দিতে না পেরে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হয়েছে তাকে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আবদুর রহমান এখন গায়েগতরে কৃষক। ক্যান্সার আক্রান্ত ছেলের চিকিৎসার জন্য প্রাথমিক খরচ জোগাতে অনেক কিছুই বিক্রি করছেন। যা পুঁজি ছিল সবই শেষ করে এখন নিরুপায়। অর্থাভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা হচ্ছে না রনির।

২২ বছর বয়সী তরুণ রনির উন্নত চিকিৎসার জন্য এখন প্রয়োজন ৩০-৩৫ লাখ টাকা। অসহায় রনির মা-বাবার পক্ষে ভিটেমাটি বিক্রি করেও একসঙ্গে এত টাকার যোগান দেওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য দেশ-বিদেশের বিত্তবান ও দানশীল মানুষের কাছে সন্তানের চিকিৎসায় সহযোগিতার আকুতি জানিয়েছেন। রনির দিশেহারা কৃষক বাবা সকাল-সন্ধ্যা মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন একটু সহানুভূতির আশায়। আর গৃহিণী মা রওশন আরা সন্তানের পাশে বসে শুধুই কাঁদছেন।

রওশন আরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক কষ্ট করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছি। রনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। ওকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। ছেলে বড় হয়ে দেশের জন্য, মানুষের জন্য কিছু করবে। কিন্তু আমার সেই ছেলে এখন অসুস্থ। ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত। প্রতি সপ্তাহে শরীরে তিন ব্যাগ করে রক্ত (ও পজিটিভ) দিতে হচ্ছে। ওর চিকিৎসার জন্য ৩০-৩৫ লাখ টাকা লাগবে। এত টাকা আমরা কোথায় পাব, কে দেবে?

কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা রওশন আরা। ছেলেকে আবার সুস্থ দেখতে চান তিনি। ছেলে যাতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন, এ জন্য দেশবাসীর কাছে চিকিৎসার অর্থ যোগানে ভিক্ষা চেয়ে তিনি বলেন, সবাই এগিয়ে এলে আল্লাহর রহমতে আমার রনি ভালো হয়ে উঠবে। আমি ছেলের জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সবার কাছে ভিক্ষা চাই। আমার ছেলেকে বাঁচাতে সাহায্য করুন। ওর জন্য দোয়া করুন।

ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপচারিতায় রহিদুল ইসলাম রনি বেঁচে থাকার আকুতি জানিয়ে বলেন, বাঁচতে কার না ইচ্ছে করে। আমি  বাঁচতে চাই। দেশের জন্য, গ্রামের মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। আমার খুব ইচ্ছে মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করার। আমি ভাবিনি এমন রোগে আক্রান্ত হব! সবই আল্লাহর ইচ্ছে। আমি সবার কাছে সহযোগিতা চাই।

নিজের অসুস্থ হওয়ার কথা বলতে গিয়ে রনি জানান, তিন-চার মাস আগে তিনি সুস্থ ছিলেন। গ্রামে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছিলেন। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে দরিদ্র অসহায় মানুষদের সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। সবকিছুই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত ঝরা শুরু হলে পাল্টে যায় পরিস্থিতি।

এরপর থেকে জ্বর শুরু হয়। এক দিন দুদিন করে প্রায় মাসখানেক ধরে জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। এরপর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডা. আব্দুল কাদের জিলানী ও ডা. কামরুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা হয়। সেখান থেকে পরে ঢাকায় গিয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর নিশ্চিত হন তিনি ব্লাড ক্যান্সারে (লিউকোমিয়া) আক্রান্ত।

একই গ্রামের রনির বাল্যবন্ধু সাকিব আল জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, রনি এমন রোগে আক্রান্ত হবে কখনো ভাবতে পারিনি। আমাদের সঙ্গে হেসে-খেলে বেড়ানো মেধাবী ছেলেটা এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। ওর এখন জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়া দরকার। কিন্তু অর্থাভাবে এখন প্রাথমিক চিকিৎসাও ঠিকমতো হচ্ছে না। আমরা বন্ধুরাসহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীরা রনির চিকিৎসার অর্থ সংগ্রহে কাজ করছি।

চিকিৎসকের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, এখন রনিকে প্রথমে চারটা কেমো থেরাপি দিতে হবে। এতে কয়েক লাখ টাকা খরচ হবে। এরপর ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা হবে। সব মিলে অন্তত ৩০-৩৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে। হৃদয়বান ও বিত্তবান মানুষদের সহযোগিতা ছাড়া এত টাকা সংগ্রহ করা কষ্টকর।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও  হাসপাতালের হেমাটোলজি অ্যান্ড বিএমটি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. এম এ খান জানান, প্রায় মাসখানেক জ্বরে আক্রান্ত থাকায় রনিকে রংপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর রনিকে ঢাকা নিয়ে আসে তার পরিবার। এখানে গ্রীন লাইফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় রনির ব্লাড ক্যান্সারে (লিউকোমিয়া) আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।

রংপুর সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোখলেছুর রহমান তরু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ওই শিক্ষার্থীর অসুস্থতার কথা শুনেছি। চেষ্টা করব আমার সামর্থ্য থেকে তাকে সহযোগিতা করার। তবে গ্রামের মানুষসহ রংপুর ও দেশের মানুষের কাছে রনির চিকিৎসার জন্য আমি নিজেও সহযোগিতা কামনা করছি। সবার জায়গা থেকে একটু একটু করে যদি হাত বাড়ানো যায়, তাহলে রনিকে উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব হবে।

রহিদুল ইসলাম রনির চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য পাঠাতে বিকাশ, নগদ অথবা রকেট করুন এই +৮৮০১৩০৭৭২৯২৫৫ নম্বরে। যে কোনো প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন ০১৭০৪৩৩৬৩৩৭ (জান্নাতুন নাইম) অথবা ০১৯৮৪৮০৮৭৮৯ (সাকিব আল জামান) নম্বরে। এ ছাড়া ব্যাংকে টাকা পাঠাতে চাইলে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, রংপুর শাখা, হিসাবের নাম-মো. জান্নাতুন নাঈম, হিসাব নম্বর-২০৫০১১৭০২০৪০০০৮০৯ এবং আইএফসি ব্যাংক, ধাপ শাখা, রংপুর, হিসাবের নাম- আবদুর রহমান, হিসাব নম্বর- ০১৯০২০৪২২৮১১

এসপি