ফাইল ছবি

মুন্সিগঞ্জের ঢাকা এক্সপ্রেসওয়েতে কম ভাড়ায় প্রাইভেটকারে যাত্রী তুলে ছিনতাই করছে একটি চক্র। শুধু ছিনতাই নয়, যাত্রীদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মাওয়ার শিমুলিয়া ঘাটের আশপাশের এলাকা থেকে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা প্রাইভেটকারে প্রথমে দু-একজন যাত্রীকে গাড়িতে তুলে ঢাকার দিকে রওনা দেয়। পথে বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড থেকে কৌশলে কম ভাড়ায় যাত্রী তুলে নেয়।

সামনের কোনো স্টেশন থেকে গাড়িতে উঠে চক্রটির অন্যান্য সদস্যরা। পরে চলমান গাড়ির মধ্যে ছিনতাইকারীরা যাত্রীর হাত-পা বেঁধে ফেলে এবং সঙ্গে থাকা সব কিছু হাতিয়ে নেয়। এরপর চলে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি। মুক্তিপণের জন্য যাত্রীদের দিয়ে পরিবার পরিজনের কাছে ফোন করে বিকাশে টাকা পাঠাতে বলে। টাকা পাঠাতে দেরি হলেই দফায় দফায় চলে মারধর।

বিকাশে টাকা পেয়ে এক্সপ্রেসওয়ের নির্জন স্থানে ভিকটিমকে নামিয়ে দিয়ে দ্রুত গাড়ি নিয়ে সটকে পড়ে চক্রটি। তাদের এক একটি মিশন সফল করতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় নেয়। এই সময়ের মধ্যে তারা এক্সপ্রেসওয়েই চক্কর দিতে থাকে। সম্প্রতি এক্সপ্রেসওয়েতে ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো মিলালে এমন চিত্রই ফুটে উঠে।

সোমবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে দৈনিক কালের কণ্ঠের মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি ও বিক্রমপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. মাসুদ খান ও তার বন্ধু শিমুলিয়া ভাঙা মোড় থেকে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে একটি প্রাইভেটকারে উঠেন। 

মাসুদ খান জানান, তিনি প্রাইভেটকারটির পেছনের সিটে বসেন। এ সময় প্রাইভেটকারের চালকের পাশে একজন যাত্রী বসেছিলেন। প্রাইভেটকারটি চন্দ্রেরবাড়ি বাজারে পৌঁছালে চালক আরও একজন যাত্রীকে পেছনের সিটে উঠায়। পরবর্তীতে চালক সামনের সিটে গাদাগাদি করে আরেকজন যাত্রী উঠায়। অল্প সময়ের মধ্যে গাড়িটি ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের শ্রীনগরের মাশুরগাও (ফেরি ঘাট) এলাকা পার হয়। এ সময় হঠাৎ চালকসহ যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীরা মাসুদ খান ও তার বন্ধুকে জাপটে ধরে এবং গাড়িতে থাকা গামছা ও গাড়ির বেল্ট দিয়ে তাদের বেঁধে ফেলে। 

ছিনতাইকারীরা তাদের নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সর্বস্ব লুটে নেয়। পরে শুরু করে দ্বিতীয় মিশন। তারা মাসুদ খান ও তার বন্ধুকে মারধর শুরু করে এবং তাদের কাছে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মাসুদ খান উপায় না দেখে তার বন্ধুর কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা এনে দেয়। চক্রটি তাদের প্রায় দেড় ঘণ্টা ঘুরিয়ে শ্রীনগর উপজেলার উমপাড়া বটতলায় নামিয়ে দেয়। ওইদিন রাতেই মাসুদ খান শ্রীনগর থানায় মামলা করেন।

এর আগে ৬ জানুয়ারি শ্রীনগর বাজারের মসজিদ মার্কেটের সাইফ বোরকা হাউসের মালিক হাফেজ সাইফুল ইসলাম চক্রটির ফাঁদে পড়েন। সাইফুল ইসলাম জানান, ওইদিন সকালে তিনি হাঁসাড়া ইউনিয়নের লস্করপুর গ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে বের হন। হাঁসাড়া স্কুলগেটে এসে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এ সময় চক্রটি প্রাইভেটকার নিয়ে তার সামনে হাজির হয়। তাড়াহুড়ো থাকায় তিনি প্রাইভেটকারে উঠে বসেন।

এ সময় তার পাশে আরেকজন বসা ছিল। প্রাইভেটকারটি ধলেশ্বরী টোলপ্লাজা পার হয়ে আরও দুইজন যাত্রী তুলেন। অল্প সময়ের মধ্যে কিছু বুঝে উঠার আগেই চালক ও অন্যান্যরা সাইফুল ইসলামকে বেঁধে ফেলে। তার কাছ থেকে নগদ প্রায় ২০ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন হাতিয়ে নেয়। পরে তার কাছে মুক্তিপণ দাবি করে মারধর শুরু করে এবং এক্সপ্রেসওয়েতে ঘুরতে থাকে। 

উপায় না দেখে তিনি বিকাশের মাধ্যমে দোকানের কর্মচারীদের কাছ থেকে ৩০ হাজার, স্ত্রীর কাছ থেকে ৫০ হাজার ও ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে মুক্তিপণ পরিশোধ করেন। পরে তাকে রাজেন্দ্রপুর এলাকায় নামিয়ে দেয় চক্রটি। পরদিন তিনি শ্রীনগর থানায় অভিযোগ করতে যান। এ সময় ডিউটি অফিসার তাকে কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করার পরামর্শ দেন। পরে আর তিনি মামলা করেননি।

এছাড়া এক্সপ্রেসওয়ের সার্ভিস লেনে প্রতিনিয়ত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। মাছ ও সবজির আড়তে আসা মৎস্যচাষি ও কৃষকরা প্রায়ই সার্ভিস লেনে ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন। এই লেনে সবচেয়ে বেশি ছিনতাই হয় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক। গত ২৪ ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে বেঁজগাও এলাকার পূর্বপাশের সার্ভিস লেন থেকে হাইওয়ে পুলিশ পরিচয় দিয়ে বীরতারা গ্রামের মো. শ্যামলের ইজিবাইক ছিনতাই হয়। এর আগে ষোলঘর ভূইছিত্র কবরস্থানের সামনে থেকে সালেপুর গ্রামের মোকলেছ শেখের ইজিবাইক ছিনতাই করে চক্রটি।

এ ব্যাপারে হাঁসাড়া হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসেন বলেন, প্রাইভেটকার নিয়ে ছিনতাইয়ের বিষয়ে আমরা জনগণকে সচেতন করার জন্য কাজ করছি। তাছাড়া হাইওয়ে পুলিশের টহল টিম প্রতিদিনই টহল দিয়ে থাকে। সার্ভিস লেনের বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট এরিয়ার থানা পুলিশ দেখে থাকে।

এসপি