চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের বিভিন্ন নর্দমায় শোভা পাচ্ছে রঙিন শাপলা 

নর্দমা কথাটা শুনলেই গা কেমন যেন গুলিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে যদি রঙিন শাপলা শোভা পায় তাহলে কেমন লাগবে? এমনই একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. মোজদার হোসেন। তার সৃষ্টিশীল চিন্তা ও নতুন উদ্যোগের ফলে পরিত্যক্ত নালা, ডোবা, পুকুরে এখন শোভা পাচ্ছে রঙিন শাপলা। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর ফলে একদিকে যেমন অবহেলিত ও পরিত্যক্ত জায়গার সৌন্দর্য বাড়বে, তেমনি দেশব্যাপী এর বিশাল বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের বিভিন্ন পরিত্যক্ত পুকুর, নালা, ডোবা ও নর্দমায় ৫শ তোড়া থেকে হাজারের বেশি লাল শাপলায় মুগ্ধ দর্শনার্থীরা। অথচ কয়েকদিন আগেও পঁচা পানির দুর্গন্ধে এ সকল ডোবা-নালার পাশ দিয়ে হাটা দুষ্কর ছিল।

হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. মোজদার হোসেন বলেন, আমাদের দেশের সকল শহরে কিছু নোংরা জায়গা দেখা যায়। এসব পরিত্যক্ত জায়গার পরিবেশ কিভাবে ভালো করা যায়- সেই চিন্তা থেকে জাতীয় ফুল শাপলার কথা মাথায় আসে। 

অন্যদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের সামনের রাস্তার ধারের বিশাল অংশ জুড়ে এমন পরিত্যক্ত নর্দমা ছিল। যা দর্শনার্থী ও হর্টিকালচার সেন্টার কর্তৃপক্ষ উভয়ের জন্যই অস্বস্তিকর। এছাড়াও দেশের বাজারে লাল শাপলার ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে। সবদিক বিবেচনা করে মাসখানেক আগে শুরু হয় পরিত্যক্ত নর্দমায় রঙিন বা লাল শাপলা দিয়ে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। 

জেলার বিভিন্ন পুকুর, বিল এবং নাটোর ও পাবনা থেকে সংগ্রহ করে হর্টিকালচার সেন্টারের দুটি পরিত্যক্ত ডোবা ও একটি নর্দমায় ৫শ রঙিন শাপলার তোড়া দেয়া হয়েছে। সর্বমোট প্রায় ৩ বিঘা ডোবা-নর্দমায় হাজারের বেশি লাল শাপলা ফুটেছে। এমনকি হর্টিকালচার সেন্টারের ভেতরের ডোবায় ফুটে থাকা শাপলা দর্শনার্থীরাও খুব পছন্দ করছেন। 

পরিত্যক্ত নর্দমাগুলো কয়েকদিন ধরে শ্রমিক দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হয়েছে। এরপর পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করতে আবাসিক এলাকার ব্যবহৃত পানি রাস্তার নিচ দিয়ে নিয়ে আসা হয়। লাল শাপলায় আকৃষ্ট হয়ে অনেককেই তুলে নেবেন তাই কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।

বুধবার বিকেলে সদর উপজেলার বারোঘরিয়ার নবদম্পতি শাহেদ ও মেরাতুন নেসা ঘুরতে এসেছেন হর্টিকালচার সেন্টার। মূল ফটকে ঢোকার মুখেই তাদের চোখ পরেছে লাল শাপলায়। যথারীতি লাল শাপলায় মুগ্ধ এই নবদম্পতি। মেরাতুন নেসা বলেন, যদিও এখন খুব বেশি ফুটে নেয়, তবুও অসম্ভব সুন্দর লাগছে ফুলগুলো। এটি এই জায়গার সৌন্দর্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। 

শাহেদ জানান, কর্তৃপক্ষের এমন উদ্যোগে কৃতজ্ঞ তিনি। 

ছেল-মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে ঘুরতে এসেছেন ব্যবসায়ী রাকিব আলী। তার স্ত্রী সুলতানা খাতুন বলেন, ঘুরতে এসে ছেলে-মেয়ে লাল শাপলায় মুগ্ধ হয়েছে। তাদের বায়না ধরেছে শাপলা নিয়ে গিয়ে বাড়ির টবে রাখবে। 

ছেলে আব্দুল্লাহ আল নিসান বলেয়, খুব সুন্দর লাল শাপলাগুলো। এর আগে টিভিতে দেখেছি। কিন্তু এখন এগুলো আমার সামনে। বেড়া না থাকলে একটা ফুল নিতাম।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের দারোয়ান বলেন, আগে এখানে পঁচা পানিতে পরিপূর্ণ থাকত এবং অনেক দুর্গন্ধ ছড়াত। কিন্তু নর্দমাটি সংস্কার করে পরিস্কার পানি ভর্তি করে লাল শাপলা দেওয়ায় এখানকার পরিবেশ পাল্টে গেছে। হর্টিকালচারের ভেতরে ঢোকার আগে সবাই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে লাল শাপলা দেখেন। 

লাল শাপলার বাণিজ্যিক সম্ভাবনা নিয়ে উপপরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি ঢাকায় লাল শাপলার একটি তোড়ার দাম ধরা হয় এক হাজার টাকা। তবে দেশে বাণিজ্যিকভাবে তেমন কোথাও এটি চাষ করা হয় না। এর একটি তোড়া থেকে প্রায় ২০ হাজার চারা উৎপাদন করা সম্ভব। তাই আগামী বছর আমাদের এখানেই লাখ লাখ চারা উৎপাদন করা হবে। দেশের যত নোংরা নালা-ডোবা রয়েছে, সকলের সঙ্গে যোগাযোগ করে তা সরবরাহ করা হবে। 

আশা করছি দেশের প্রথম লাল শাপলার চারা বাজারজাত করে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করবে। এমনকি অনেকেই বাড়ির ছাদ, টব ও বেলকুনিতে লাল শাপলা রাখার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। এছাড়াও অনেকেই ঔষধি কাজে লাল শাপলা ব্যবহার করতে আমাদের কাছে এটি কিনে নিতে চাই। 

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের সঙ্গে পরিত্যক্ত নর্দমায় রঙিন শাপলার চারা সরবরাহের বিষয়ে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন ও জেলার সকল নর্দমায় এটি করতে পারলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান, শহর, রাস্তার মোড় ও স্থাপনার সৌন্দর্য বাড়বে। আগস্ট-সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ফুটে থাকবে জাতীয় ফুল শাপলা। 

এসপি