জুতা নিয়ে শহীদ মিনারের বেদিতে শিক্ষকরা!
শহীদ মিনারে জুতা পায়ে (সামনে ও পেছনে) শিক্ষকরা দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার বিজ্ঞান শাখার শিক্ষকদের জুতা পায়ে শহীদ মিনারের সিঁড়িতে ওঠার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে জেলাজুড়ে চরম বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার (২০ জানুয়ারি) বিকেল নওদাবাস ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ‘আশ্বিনী কুমার বসুনিয়া’ নামের এক ফেসবুক আইডিতে এসব ছবি আপলোড করলে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
বিজ্ঞাপন
এর আগে বৃহস্পতিবার ওই উপজেলার নওদাবাস কালীমোহন তফশিলী উচ্চবিদ্যালয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার বিজ্ঞান শাখার শিক্ষকদের নিয়ে ‘উদ্ভাবনে মজার বিজ্ঞান’ নামে একটি সংঠগনের যাত্রা শুরু করে। এরপরই ওই ছবি সেখানে তোলা হয়।
জানা গেছে, হাতীবান্ধা উপজেলার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার বিজ্ঞান শাখার শিক্ষকদের নিয়ে নওদাবাস কালীমোহন তফশিলী উচ্চবিদ্যালয়ে ‘উদ্ভাবনে মজার বিজ্ঞান’ নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে নওদাবাস ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশ্বিনী কুমার বসুনিয়া, সাবেক উপজেলা ভাইচ চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবদলের সম্পাদক সামসুজ্জামান সেলিম, সাবেক অধ্যক্ষ নুরুজ্জামান, নওদাবাস কালীমোহন তফশিলী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন সাগরসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষক, বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানের কোনো এক সময় তারা ওই বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে গিয়ে ফটোসেশন করেন, যা পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করা হয়েছে। সেই ছবিতে দেখা যায় বেশ কয়েকজন শিক্ষক জুতা পায়ে শহীদ মিনারের সিঁড়িতে উঠে ফটোসেশনে অংশ নিয়েছেন। এমন ছবি দেখে শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা।ৎ
এ প্রসঙ্গে নওদাবাস কালীমোহন তফশিলী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন সাগর বলেন, জুতা পায়ে শহীদ মিনারের সিঁড়িতে ওঠা দোষের কিছু নয়। তবে বেদিতে ওঠা ঠিক নয়। সিঁড়ি আর বেদি এক নয়। আমরা তো মসজিদের সিঁড়িতে জুতা রেখে মসজিদে প্রবেশ করি।
তার এমন যুক্তি মানতে নারাজ হাতীবান্ধা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের আহ্বায়ক রোকনুজ্জামান সোহেল। তিনি বলেন, তারা শহীদ মিনারের সিঁড়িতে উঠে ছবি তোলা মোটেও ঠিক করেননি। তাদের মনে রাখা উচিত ছিল, শহীদ মিনার আমাদের কতটা শ্রদ্ধার স্থান। একজন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের উপস্থিতিতে এমন পরিস্থিতি দুঃখজনক।
হাতীবান্ধা উপজেলা মুক্তিযুদ্ধকালীন সংগ্রাম কমিটির সম্পাদক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, জুতা পায়ে শহীদ মিনারের সিঁড়িতে ওঠা ঠিক কি না, তা নিয়ে আমি কথা বলব না। আমি বলব, আমরা শহীদ মিনারের সিঁড়ি বা বেদি কোনোটাইতেই জুতা পায়ে উঠি না। এটা আমাদের শিষ্টাচার। আমরা যুগে যুগে তা মেনে চলে আসছি, যা আমাদের মানা উচিত বলে আমি মনে করি।
এ বিষয় জানতে নওদাবাস ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশ্বিনী কুমার বসুনিয়াকে ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এনএ