খালিশপুর ও দৌলতপুর জুট মিলের শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ ও মিল চালুর দাবিতে চার দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে খালিশপুর ও দৌলতপুর জুট মিল যৌথ কারখানা কমিটির অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিকদের ২০১৫ সালের মজুরি কাঠামো অনুযায়ী বিভিন্ন উৎসব বোনাসের ডিফারেন্স, নোটিশ পে, লক ডাউনের টাকা ইত্যাদি পাওনার দাবি জানানো হয়।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আগামী ১৩ অক্টোবর বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দৌলতপুর জুট মিলস গেটে শ্রমিকদের অবস্থান কর্মসূচি, ২০ অক্টোবর বেলা ১১টায় খুলনা বিভাগীয় শ্রম পরিচালক বরাবর স্মারকলিপি পেশ, ২৪ অক্টোবর এসপি, শিল্প পুলিশ-৬ বরাবর স্মারকলিপি পেশ এবং আগামী ২৯ অক্টোবর খালিশপুর শিল্পাঞ্চলে লাল পতাকা মিছিল পালন করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পাঠ সংগঠনের সভাপতি মনির হোসেন মনি বলেন, বিজেএমসি অধিভুক্ত ৫টি পাটকল (খালিশপুর জুট মিলস, দৌলতপুর জুট মিলস, জাতীয় জুট মিলস, কেএফডি ও আর আর জুট মিলস)-এর আনুমানিক ১৫ হাজার শ্রমিক কর্মরত ছিল। এ ৫টি মিল ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক বন্ধ করার পর জাতীয় নির্বাচনের ইস্তেহার অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ মার্চ ২০১১ সালে পুনরায় চালু করেন। ফলে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে সুস্থভাবে জীবন-যাপন করছিলাম। কিন্তু মহামারি করোনাকালে সরকার ২০২০ সালের ২ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এবং ২০২০ সালের ৩০ জুন উল্লেখ করে বিজেএমসি কর্তৃক নোটিশ প্রদানপূর্বক বিজেএমসি অধিভুক্ত ২৫টি পাটকল বন্ধ ঘোষণা করে। বন্ধ ঘোষণা করার সময় সকল শ্রমিকের বকেয়া পাওনা ২ মাসের মধ্যে পরিশোধের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু যথাসময়ে বকেয়া না পাওয়ায় শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে সরকার প্রায় ১ বছর পর স্থায়ী শ্রমিকদের এবং পরবর্তীতে বদলি শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করতে শুরু করে। তবে এখনও ৬ সপ্তাহের মজুরি, উৎসব বোনাসের ডিফারেন্সসহ বেশকিছু পাওনা বকেয়া আছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, গেটপাসে নামের বানান ভুলসহ নানা অজুহাতে এখনও অনেক শ্রমিককে টাকা পরিশোধ করা হয়নি। সঙ্গতকারণে অমানবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি বিজেএমসি’র পরিচালিত ৫টি পাটকলের শ্রমিকরা। মিলগুলোর শ্রমিকদের কোনো পাওনা এখনও পরিশোধ করা হয়নি। অথচ ২০১৫ সালের ‘মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন’-এর ঘোষণা অনুযায়ী মজুরি কাঠামো মোতাবেক এই শ্রমিকরা মজুরি পেয়েছে। সুতরাং বকেয়া এরিয়ারের অর্থ এবং একই সঙ্গে ২০১৫ সালের মজুরি কাঠামো অনুযায়ী বিভিন্ন উৎসব বোনাসের ডিফারেন্স, নোটিশ পে, লক ডাউনের টাকা ইত্যাদি আমাদের ন্যায্য প্রাপ্য। কিন্তু প্রায় ১ বছর ৬ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরও আমরা প্রাপ্য অর্থ পাইনি। তাই সরকারের ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী আমাদের বকেয়া এরিয়ার, গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের আওতায় প্রাপ্য অর্থ, ৬০ দিনের নোটিশ পে, উৎসব বোনাসের ডিফারেন্স, ২ মাসের লক ডাউনের টাকাসহ সকল পাওনা অবিলম্বে এককালীন পরিশোধ ও বন্ধকৃত সকল পাটকল রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চালু করার দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা সমন্বয়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ জেলা সমন্বয়ক জনার্দন দত্ত নান্টু, শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্যের সমন্বয়ক রুহুল আমিন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট খুলনা জেলা সভাপতি আব্দুল করিম, খালিশপুর ও দৌলতপুর জুট মিল যৌথ কারখানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, যশোর-খুলনা বদলি আঞ্চলিক কমিটির আহ্বায়ক ইলিয়াস হোসেন, দৌলতপুর জুট মিল কারখানা কমিটির সভাপতি নূর মোহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জেল হোসেন, শ্রমিকনেতা শামস শারফিন শ্যামন, নাসিম উদ্দিন জয়, আব্দুর রাজ্জাক তালুকদার, শেখ গোলাম মোস্তফা, আবু বকর সিদ্দিক, ছাত্র ফেডারেশন খুলনা মহানগর আহ্বায়ক আল আমিন শেখ প্রমুখ। 

মোহাম্মদ মিলন/এমএএস