সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক

মাতৃত্বের সাধ মেটাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল থেকে নবজাতক চুরি করে নিয়ে যান মৌসুমী আক্তার (২২)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমনটিই জানতে পারে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। শনিবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নগর গায়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান নগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক।

নবজাতক উদ্ধার অভিযান বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন ছিল। 

নগর পুলিশ প্রধান বলেন, ওই নারী (মৌসুমী আক্তার) বিবাহিত। কিন্তু আট বছরেও তার সন্তান হয়নি। মাতৃত্বের সাধ মেটাতে তিনি হাসপাতাল থেকে বাচ্চা চুরির পরিকল্পনা করেন।

এরই অংশ হিসেবে ২১ জানুয়ারি মৌসুমী আক্তার রামেক হাসপাতালে যান। এরপর ওই ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওই নবজাতককে তার পছন্দ হয়। তিনি নবজাতককে কোলে নিয়ে আদরও করেন।

পরদিন ২২ জানুয়ারি তিনি আবারও হাসপাতালে যান। সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার দিকে বাচ্চা নিয়ে তিনি বেরিয়ে যান হাসপাতাল থেকে। ওই সময় নবজাতকের মা ঘুমিয়ে ছিলেন।

আরএমপি কমিশনার বলেন, বাচ্চা হারানোর পর নবজাতকের মা পুলিশের কাছে অজ্ঞাত ওই নারীর বর্ণনা দেন। এরপর সিসিটিভি ফুটেজে ওই নারীকে শনাক্ত করে পুলিশ। শনিবার অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় হারিয়ে নবজাতককে।

তিনি আরও বলেন, নবজাতক হারিয়ে যাওয়ার পর নগরীর রাজপাড়া থানাকে অবহিত করে তার পরিবার। এরপর আমরা হাসপাতালে যাই। কিন্তু সিসিটিভি ক্যামেরা সচল থাকলেও হাসপাতালে বিদ্যুৎ না থাকায় ফুটেজ পাওয়া যায়নি।

মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফটকে আমাদের দুটি সিটিটিভি ক্যামেরা ছিলে। সেই ক্যামেরার ফুটেজের সূত্র ধরে পুলিশ আসামি মৌসুমী আক্তারকে গ্রেফতার করে। নবজাতককে তার বাবা-মায়ের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা হারানো সন্তান ফিরে পেয়ে খুশি।

আরএমপি কমিশনার আরও বলেন, ওই নারী (মৌসুমী আক্তার) আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। এরপর জানা যাবে, কী উদ্দেশ্যে তিনি নবজাতক চুরি করেছিলেন। তিনি নবজাতক চুরি ও পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত কি-না সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।  

নগর পুলিশ কমিশনার বলেন, আমরা নগরীর নিরাপত্তায় সিটিটিভি ক্যামেরার আওতায় এনেছি পুরো নগরী। এখানে অপরাধ করে কেউ পালিয়ে যেতে পারবে না। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) আবু আহাম্মদ আল মামুন, সহাকারী কমিশনার রাকিবুল হাসান, নবজাতকের বাবা মাসুম রবিদাসসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। 

প্রসঙ্গত, শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ২৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে হারিয়ে যায় তিনদিনের নবজাতক। মা শিল্পী রবিদাস কমলির চোখ ফাঁকি দিয়ে মাত্র দুই মিনিটের মধ্যেই বাচ্চা নিয়ে উধাও হন মৌসুমী।

এর ২৭ ঘণ্টা পর শনিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুর সোয়া ১টার দিকে নগরীর মোন্নাফের মোড় পল্টুর বস্তি থেকে ওই নবজাতককে উদ্ধার করে নগর পুলিশ। গ্রেফতার মৌসুমী আক্তার (২২) পল্টুর বস্তি হোসেন আলীর মেয়ে। স্বামী সজিব আলীর সঙ্গে ওই বস্তিতে থাকতেন মৌসুমী। 

আর নবজাতকের বাবা মাসুম রবিদাস নগরীর লক্ষ্মীপুর আইডি হাসপাতাল রবিদাসপাড়ার বাসিন্দা। রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনেই জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন তিনি। বাচ্চা চুরির ঘটনায় শুক্রবার তিনি নগরীর বাজপাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এমএসআর