নানির সঙ্গে শিশু তিন ভাইয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীর ও যোবাইদুল।

নিজের জায়গা জমি নেই, অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চলে। এর মধ্যে মা-হারা তিন সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন নানি জামিলা বেগম (৫৫)। এদিকে চার সন্তানের জননী ময়না বেগম (৪০)। প্রতিদিন দিনমজুরির কাজ করে ছেলে-মেয়েদের লালনপালন করতেন তিনি। তবে হঠাৎ ওই নারী অসুস্থ হয়ে পড়লে বন্ধ হয় দিনমজুরের কাজ।

পরে চিকিৎসকের কাছে জানতে পারেন তিনি ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পারায় দীর্ঘদিন বিছানায় পরে থাকার পর অবশেষে ২০ দিন আগে মারা যান তিনি। তার মৃত্যুর পর মা-হারা হয়েছেন চার সন্তান।

তার মধ্যে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। আর বাকি তিন ছেলে মামুন (১২), জাহাঙ্গীর আলম ( ৫) ও যোবাইদুল (৩) কাঁদছে মায়ের জন্য। ছেলে তিনটির খবর রাখছেন না বাবাও। বর্তমানে শিশুরা নানির হেফাজতে রয়েছে।

ময়না বেগম কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের মোরছিয়ালপাড়া গ্রামের মৃত আজগার আলীর মেয়ে। শিশু তিনটির দুঃখ দেখে এগিয়ে এসেছেন স্থানীয় মেহের জামাল, আতিকুর রহমান ও রফিকুরজ্জামানসহ অনেকে। শনিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে শিশু তিনটির নানিকে কিছু অর্থসহায়তা করেছেন তারা। 

মা-হারা তিন শিশুর পাশে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় যুবকরা

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ময়না বেগমের বিয়ে হয় সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের মোসলেম উদ্দিনের সঙ্গে। স্বামী ভরণপোষণ না দিলে চলে আসেন নিজ বাড়িতে। মায়ের অভাবের সংসারে বোঝা না হয়ে বেঁচে নেন দিনমজুরের কাজ।

কাজ করে ছেলে-মেয়েদের লালনপালন করছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে মা হারা হয়েছেন তার চার সন্তান। চার সন্তানের মধ্যে ছোট দুই শিশুকে নিয়ে বড় বিপাকে পড়েছেন মৃত আজগার আলী স্ত্রী নানি জামিলা বেগম।

সহায়তাকারী আতিকুর ও মেহের জামাল বলেন, ময়না বেগম কিছুদিন আগে মারা গেছেন। তার ছোট ছোট তিন ছেলেসন্তান রয়েছে। খেয়ে না খেয়ে নানিবাড়িতে দিন পার করছেন শিশুরা। এই খবর শুনে আমরা কয়েকজন মিলে কিছু অর্থসহায়তা করেছি।

তাতে না হয় কয়েকদিন ভালো খেতে পারবে, কিন্তু পরে কী হবে তাদের? তাই সমাজের দানশীল ও বিত্তবান মানুষ এগিয়ে আসলে হয়তো শিশুগুলোর কিছু একটা করা সম্ভব বলে জানান তারা।

স্থানীয় কাজিয়াল হোসেন বলেন, ময়নার মৃত্যু পর খুবই কষ্টে আছেন তার অবুঝ শিশুরা। শিশুদের বাবা খোঁজখবর রাখছেন না। বাচ্চাদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন তার নানি। মানুষের বাড়িতে কাজ করে কোনোরকমভাবে সংসার চালাচ্ছেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে কুড়িগ্রাম সদর পাঁচগাছী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

জুয়েল রানা/এমএসআর