শিশু ইয়াসমিন

একে তো করোনা মহামারি। তার ওপর শীত। এর মধ্যে সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত গায়ে শীতের পোশাক ছাড়াই এক বাস থেকে আরেক বাসে চড়ে যাত্রীদের কাছে মাস্ক বিক্রি করে শিশু ইয়াসমিন। কারণ, তার নানির চিকিৎসা খরচ ও ওষুধের টাকা জোগাড় করতে হচ্ছে তাকে।

রোববার (২৪ জানুয়ারি) রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ মোড় থেকে মাস্ক বিক্রি করার এক ফাঁকে বাসে আলাপকালে ইয়াসমিন তার জীবনকাহিনি শোনায়। এভাবে প্রতিদিন তার শতাধিক মাস্ক বিক্রি হয় বলে জানায় সে।

ইয়াসমিন বলে, সারা দিন এক বাস থেকে আরেক বাসে চড়ে মাস্ক কিনে ১টা ৫টাকা ও ৩টা ১০ টাকা করে বিক্রি করি, তা থেকে যে টাকা আয় হয়, তা দিয়ে বাড়ির অসুস্থ নানির জন্য ওষুধ কিনি। নানির কিডনির সমস্যা থাকায় তাকে এ পেশা বেছে নিতে হয়েছে।

ইয়াসমিন জানায়, আগে বাসের মধ্যে মানুষের কাছে দু-এক টাকা করে চাইতাম। কেউ টাকা দিত আবার কেউ কোনো টাকাই দিত না। খুব কষ্ট হতো অসুস্থ নানির জন্য ওষুধ কিনতে না পারায়। পরে বাসের মধ্যে থেকে কয়েকজন যাত্রী আমাকে বুদ্ধি দিল যেন এই করোনাকালীন আমি মাস্ক বিক্রি করি। সেই থেকে এ পেশা বেছে নিয়েছি বলে জানায় সে।

বাসে থাকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ইয়াসমিনের এই কম বয়সে স্কুলে থাকার কথা। অথচ সে স্কুলে না গিয়ে মাস্ক বিক্রি করে বৃদ্ধা নানির ওষুধ কিনে তার চিকিৎসা করাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা বিরল। তার মাস্ক বিক্রি করা দেখে ২০ টাকা দিয়ে ৬টি মাস্ক কিনেছি বলে জানান তিনি।

বাসের আরেক যাত্রী পৌরসভার কর্মকর্তা ওমর আলী বলেন, সে যেভাবে চিৎকার করে এতটুকু বয়সে মাস্ক বিক্রি করে, তা দেখে সত্যি মায়া লাগে। শুনেছি মেয়েটির মা-বাবা কেউ নেই। বাসা ভাড়া করে গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় অসুস্থ নানির সঙ্গে থাকে। মাস্ক বিক্রি করা টাকা দিয়ে ওষুধ কিনে নানির চিকিৎসা করাচ্ছে। সেটা শুনে আমি ১০ টাকা দিয়ে তার কাছ থেকে ৩টি মাস্ক কিনেছি বলে জানান এই কর্মকর্তা।

ফরিদপুর-মাগুরাগামী অনিক পরিবহনের লোকাল বাসের চালক শরিফুল জানান, প্রতিদিন ভোর থেকে ইয়াসমিন  বাসে করে গোয়ালন্দ মোড় থেকে রাজবাড়ীর বড়পুল পর্যন্ত মাস্ক বিক্রি করে। আবার বড়পুল থেকে গোয়ালন্দ মোড় পর্যন্ত এসে বিক্রি শেষ করে বলে জানান তিনি।

এনএ