রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দুপল্লিতে হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ‌আরও ১৩ আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (২৫ অক্টোবর) বিকেলে পীরগঞ্জ আমলি আদালতের বিচারক ফজলে এলাহী খান এ আদেশ দেন। এর আগে আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিল পুলিশ।

আদালতের সাধারণ নিবন্ধক শহিদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নতুন করে ১৩ আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। এর আগে ৩৭ আসামিকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। রিমান্ড শেষে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।  

এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটের মামলায় নতুন করে ১৩ জনের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছিল। আদালত শুনানি শেষে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এই ১৩ জনকে ঘটনার পরদিন (১৮ অক্টোবর) বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকতে পারে, সে কারণে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে হিন্দুপল্লিতে হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আবদুল্লাহ আল মামুন (২৩) ও ওমর ফারুক ওরফে টনেট (২৪) নামে আরও দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার (২৪ অক্টোবর) রাতে গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার দুজন ছাত্রশিবিরের কর্মী জানিয়ে রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, গ্রেফতার আবদুল্লাহ আল মামুন ও ওমর ফারুক ঘটনার রাতে পেট্রল নিয়ে মোটরসাইকেলে করে সাদুল্লাপুর থেকে পীরগঞ্জে এসে হামলায় অংশ নেন। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার বিষয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

এদিকে পীরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরেস চন্দ্র জানান, বড় করিমপুর মাঝিপাড়া গ্রামে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা তিনটি মামলা এবং হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় আরেকটি মামলা করা হয়েছে। সোমবার সকাল পর্যন্ত এসব মামলায় ৬৬ জন গ্রেফতার হয়েছেন।

এদের মধ্যে ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়া ও সহিংসতার ঘটনা উসকে দেওয়ার অন্যতম হোতা পরিতোষ সরকার, উজ্জ্বল হোসেন, বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা সৈকত মণ্ডল ও মসজিদের ইমাম রবিউল ইসলামসহ অনেকেই রয়েছেন। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নিজেদের জড়িত থাকার দায় স্বীকার করেছেন।

উল্লেখ্য, গত রোববার (১৭ অক্টোবর) রাতে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে পীরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নের বড়করিমপুর মাঝিপাড়া গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে উগ্রবাদীরা। এ ঘটনায় গ্রামটির ১৫টি পরিবারের ২১টি বাড়ির সব কিছু আগুনে পুড়ে গেছে। সব মিলিয়ে অন্তত ৫০টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। হামলাকারীরা গরু-ছাগল, অলংকার, নগদ টাকাও নিয়ে গেছেন বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের। এ ঘটনায় পীরগঞ্জ থানায় দায়ের করা চারটি মামলায় ৬৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর