মোহাম্মদ আলী সরকার

রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকারকে আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের বিরোধিতা করায় তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক এই ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে নগর আওয়ামী লীগ।

সোমবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। সভা সঞ্চালনা করেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। 

রাতে ডাবলু সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণে বাধা দিয়েছেন মোহাম্মদ আলী। কাজেই দলীয় শৃঙ্খলা ভাঙার দায়ে নগর আওয়ামী লীগের অন্তর্গত ১৪ নম্বর ওয়ার্ড (পূর্ব) আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। চূড়ান্তভাবে এই পদ থেকে তাকে বহিষ্কারের জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। 

ডাবলু সরকার আরও বলেন, নির্ধারিত স্থানেই শহীদ মিনার হবে, হতেই হবে-এটা সবার দাবি। এটি আমাদের প্রাণের দাবি, যে কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করা হবে। যে ব্যক্তি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল এবং শহীদ মিনার নির্মাণে বাধা দেয়, তার আওয়ামী লীগের দলীয় পদে থাকার কোনো অধিকার নেই। শহীদ মিনারের ব্যাপারে যিনি আদালতে রিট করেছেন, তাকে অনুরোধ করছি, স্বেচ্ছায় রিট প্রত্যাহার করে নেন। না হলে আপনাকে রাজশাহীতে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হবে।

এদিকে, নির্ধারিত স্থানে রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় নগর ভবনের সরিৎ দত্ত গুপ্ত সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের দাবিটি রাজশাহীবাসীর প্রাণের দাবি। ভাষা সৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলসহ সর্বস্তরের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে নগরীর প্রাণকেন্দ্র সোনাদীঘি সংলগ্ন সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিত্যক্ত স্থানে রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। 

সেই পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। শহীদ মিনার নির্মাণে ইতোমধ্যে সাড়ে ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শহীদ মিনার নির্মাণের ব্যাপারে শুরুতে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একমত থাকলেও পরবর্তীতে তিনি তার অবস্থান বদলে ফেলেন। রাজশাহীর সর্বস্তরের মানুষের প্রাণের দাবি রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাধা দিয়ে আটকানো যাবে না।

সভায় রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল এবং শহীদ মিনার নির্মাণে বাধাদানকারী ব্যক্তি আওয়ামী লীগের দলীয় পদে থাকতে পারে না। পাকিস্তান আমলে শহীদ মিনার নির্মাণে বাধা দেওয়া হত। তেমনিভাবে রাজশাহীতে শহীদ মিনার নির্মাণে বাধা দেওয়া হচ্ছে। 

বাদশা আরও বলেন, রাজশাহী জেলা পরিষদের যেসব ছোট ছোট জায়গা আছে, সেগুলো যেন মিনি পাকিস্তান। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও শহীদ মিনার করতে দেওয়া হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বিরোধীতাকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না।

সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর রুহুল আমিন প্রামানিক বলেন, আমরা গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি। সেই শহীদ মিনার নির্মাণে বাধা এসেছে। যতই বাধা আসুক, সেখান থেকে শহীদ মিনার কেউ সরাতে পারবে না। সরাতে দেওয়া হবে না।  প্রতীকী শহীদ মিনারে আমরা আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি পুষ্পস্তবক অর্পণ করব।

এ বিষয়ে জানতে কয়েক দফা চেষ্টা করেও মোহাম্মদ আলী সরকারের মুঠোফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি। ফলে এ নিয়ে তার মন্তব্য মেলেনি।

প্রসঙ্গত, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী সরকার দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচনে অংশ নেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব জামান ভুলুকে হারিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি।

সম্প্রতি জেলা পরিষদের মালিকানাধীন সার্ভে ইনস্টিটিউটের জায়গায় রাজশাহীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নিমার্ণের প্রক্রিয়া শুরু করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। এতে বাধা দেয় জেলা পরিষদ। তারা ওই স্থানে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করছিল। পরে দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতাও হয়।

সর্বশেষ গত ১৬ ডিসেম্বর ভাষা সৈনিক গোলাম আরিফ টিপু আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ওই অনুষ্ঠানে রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা ও ১৪ দলীয় জোটের স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

পরে সার্ভে ইনস্টিটিউট ভবন গুঁড়িয়ে দেয় সিটি করপোরেশন। এরপর আবার শীতল যুদ্ধে জড়ায় জেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশন। এরপর বিষয়টি গড়ায় উচ্চ আদলতে। রাজশাহী জেলা পরিষদের সদস্য গোলাাম মোস্তফার রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্তের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রুল জারি করা হয়েছে। 

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এসপি