পরোয়ানা নিয়ে ওসি আসার আগেই ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে গেল কারা?
নিখোঁজ ব্যবসায়ী সুমন দেবনাথ
বরিশালে র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার ২১ দিন পার হলেও সুমন দেবনাথ নামে এক ওষুধ ব্যবসায়ীর সন্ধান মেলেনি। বিভিন্ন থানায় ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অফিসে খুঁজেও সুমনের সন্ধান না পাওয়ায় চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছে তার পরিবার।
তাদের দাবি- পুলিশ আসার ছয় ঘণ্টা আগেই র্যাব পরিচয় দিয়ে কে বা কারা সুমনকে তুলে নিয়ে গেছে। সুমন গ্রেফতার হলেও তার অবস্থান জানা তাদের আইনগত অধিকার।
বিজ্ঞাপন
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি একজন হত্যা মামলার আসামি হিসেবে সুমনকে গ্রেফতারে আইনগত সহায়তা চাইলে আমি তা প্রদান করি। কে বা কারা তাকে তুলে নিয়ে গেছে তা আমরা অবগত নই।
এদিকে দামুড়হুদা থানার ওসি আব্দুল খালেক সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, দামুড়হুদা উপজেলার মীম হত্যা মামলার আসামি সুমন দেবনাথ। তাকে গ্রেফতার করতে গত ২৪ নভেম্বর দিবাগত রাত ১২টার দিকে বরিশাল তার বাড়িতে অভিযান চালিয়েও তাকে পাইনি। শুনেছি ৬/৭ জনের একটি দল ওইদিন সন্ধ্যায় তার দোকান থেকে তাকে তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু কারা নিয়েছে তা আমি জানি না। থানায়ও কেউ তাকে সোপর্দ করেনি।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, বরিশাল সদর উপজেলার টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়নের সাহেবেরহাট বন্দরের রতন মেডিকেল হলের মালিক সুমন দেবনাথ। তার বাবা তপন দেবনাথ একই বাজারের কাপড় ব্যাবসায়ী। ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় সুমনকে তার দোকান থেকে র্যাব পরিচয়ে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় ৬/৭ জন ব্যক্তি। যা বাজারের কয়েকশ মানুষ দেখেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী রাজিব। এরপর থেকে সুমনের কোনো হদিস মিলছে না।
নিখোঁজ সুমনের বাবা তপন দেবনাথ বলেন, ঘটনার দিন আনুমানিক রাত ১২টার দিকে আমাদের বাড়িতে স্থানীয় ইউপি সদস্য অমরকে নিয়ে হাজির হন দামুড়হুদা থানার ওসি। তাদের সঙ্গে বন্দর থানা পুলিশও ছিল। এ সময় তারা জানায় যে, সুমন দামুড়হুদা থানার একটি হত্যা মামলার আসামি। কিন্তু এর আগেই সুমনকে সন্ধ্যায় র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায় কতিপয় ব্যক্তি।
তিনি বলেন, আমার ছেলে গ্রেফতার হয়েছে নাকি গুম হয়েছে বুঝতে পারছি না। আমরা বন্দর থানায় জিডি করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু থানার ওসি আমাদের ফিরিয়ে দিয়েছেন।
টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য অমর দেবনাথ বলেন, আমাকে সঙ্গে নিয়েই দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশের ওসি রাতে সুমনদের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারি তাকে তুলে নিয়ে গেছে।
টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাহাউদ্দীন আহমেদ বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। সুমন যদি অপরাধী হয়েও থাকে তাহলে তার পরিবারকে জানানো হোক। একটি লোকতো আর হাওয়া হয়ে যেতে পারে না।
এদিকে সাহেবেরহাট বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামিম খান লিখন বলেন, আমি সুমনের বাবা তপন দেবনাথকে নিয়ে বিমানবন্দর থানায় গিয়েছিলাম সুমনের সন্ধান পেতে। এ বিষয়ে পুলিশ অপারগতা প্রকাশ করে। সাধারণ ডায়েরি করতে চাইলেও পুলিশ তা গ্রহণ করেনি।
এদিকে উপার্জনক্ষম সুমনকে হারিয়ে তার স্ত্রী-সন্তানরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সুমনের স্ত্রী সংগীতা দেবনাথ বলেন, আমার স্বামী অপরাধী হলেও তা আমাদের জানতে হবে। এটা আমার অধিকার। আমি আইনগতভাবে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ চাই। তিন বছরের বাচ্চা নিয়ে বর্তমানে আমি নিরাপত্তাহীনতায় আছি।
আরএআর