সেলফি তোলায় ব্যস্ত দর্শনার্থীরা

গোলাপ গ্রামখ্যাত সাভারের বিরুলিয়া এখন দর্শনার্থী সমাগমে ভরপুর। ভালবাসার টুকটুকে লাল গোলাপের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে দূর দূরান্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসেন এই গোলাপ গ্রামে। সৌন্দর্যের সংস্পর্শ নিতে অনেকেই খেয়াল খুশিমতো বাগানে প্রবেশ করে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন সেলফি তোলায়। গোলাপের ডাল ভেঙে কিংবা বাগানের মাটি অনুর্বর করছেন নিজেদের অজান্তেই। বাগানে প্রবেশ নিষেধ লেখা সাইনবোর্ডও মানেন না অনেকেই। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গোলাপ চাষিরা।

সবুজের মাঝে ফুটে আছে লাল গোলাপ। এ যেন বাঙলা ও বাঙালির চিরচেনা প্রতিচ্ছবি। এ স্মৃতি ধরে রাখতে চায় একখানা সেলফি। সৌন্দর্যের টানে মাতাল মনে কিছুক্ষণের জন্য সবাই ভুলে যায় গোলাপ চাষির কথা। এতেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গোলাপ চাষিরা। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাভার উপজেলার বিরুলিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে গোলাপের চাষ হচ্ছে। ১৯৯০ সালে মিরপুর থেকে এসে বিরুলিয়ায় প্রথম গোলাপের চাষ শুরু হয়। বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ চাষ দেখে স্থানীয়রাও উদ্বুদ্ধ হয়ে শুরু করেন গোলাপের চাষ। চাষিরা লাভবান হওয়ায় ইউনিয়নের মোইস্তাপাড়া, সামাইর, শ্যামপুর, সাদুল্লাপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে গোলাপ চাষ।

মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে সাভারের বিরুলিয়ার গোলাপ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রীতিমতো পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে গোলাপ গ্রাম। বাগানে প্রবেশের সরু সড়কে যেন পা ফেলানোর ঠাঁই নেই। বাগানে বাগানে শুরু হয়েছে সেলফির প্রতিযোগিতা। রীতিমতো দর্শনার্থীর চাপে বিরক্ত চাষিরা।

বাগান মালিক আবুল কালাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দর্শনার্থীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তারা কোনো ধরনের কথা কিংবা সাইনবোর্ড না দেখেই বাগানে প্রবেশ করে ছবি তুলছেন। এতে অনেক সময় গাছের ডাল ভেঙে যায়, গাছের গোড়া নরম হয়, বাগানের মাটি শক্ত হয়ে যায়। পরে শ্রমিক দিয়ে মাটি আবারও উপযোগী করতে হয়। এতে চাষের ব্যয় বেড়ে যায়। এ সময় তিনি দর্শনার্থীদের বিনা অনুমতিতে বাগানে প্রবেশ না করার আহ্বান জানান।

গোলাপ

সৈয়দ আলী নামে আর এক বাগান মালিক বলেন, অনেক দর্শনার্থীকে বাগানে প্রবেশ করতে না দিলে খারাপ আচরণ করেন। রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে অনেকেই প্রবেশ করে বাগানে। আমরা এর একটা সমাধান চাই। যারা বাগানে সেলফি তুলতে কিংবা বেড়াতে আসবেন তারা যেন বাগানে প্রবেশ না করে সেলফি তোলেন। বাগান ও গোলাপ গ্রামের নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি। 

এ ব্যাপারে দর্শনার্থী অরনি বলেন, এখানে আসলে তেমন কোনো নির্দেশনা নেই। কিছু কিছু বাগানে লেখা রয়েছে প্রবেশ নিষেধ। আমরা তো অনেক দূর থেকে আসি। দুই একটি ছবি না তুললে কেমন হয়? তাই যেখানে এ ধরনের সাইনবোর্ড নেই সেই সকল বাগানে প্রবেশ করে ছবি তুলছি। তবে গোলাপ চাষিরা যদি কারণসহ প্রবেশ নিষেধ লেখা সম্বলিত সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়, তাহলে এ ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না।

পুরো পরিবার নিয়ে গোলাপ গ্রাম দেখতে এসেছেন সালমা নামে আরেক দর্শনার্থী। দলবেঁধে বাগানে প্রবেশ করলে গোলাপ চাষিদের ক্ষতি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তো অনুমতি নিয়েই প্রবেশ করেছি। বাগানে প্রবেশ করার শর্ত হলো ৫০ টাকার ফুল কিনতে হবে। সেটি পূরণ করেছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বলেন, সাভারের বিরুলিয়ায় প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে গোলাপের চাষ করছেন সেখানকার চাষীরা। আমরা নিয়মিত তাদের বিভিন্ন সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। যে কোনো সমস্যা আমাদের জানালে অবশ্যই আমরা তা সমাধানে চেষ্টা করব। সেলফি বিড়ম্বনা থেকে বাঁচতে প্রত্যেক চাষিকে বাগানের প্রবেশ পথে কারণসহ প্রবেশ নিষেধ সম্বলিত সাইনবোর্ড দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। 

এসপি